রাস্তা হবে বড়, কাটা পড়ছে শত শত গাছ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর উপজেলার দেওহাটা থেকে পোষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত (পুরোনো সড়ক) প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রশস্ত করা হবে। এ জন্য সড়কের দুই ধারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৩৩০টি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলছে, এভাবে গছ কাটায় এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তাদের মতে, রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো দিয়েই রাস্তার ডিভাইডার (বিভাজক) করা যেতে পারে কিংবা রাস্তার এক পাশের গাছ কাটা যেতে পারে। তাতে রক্ষা পাবে পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে মহাসড়কের ওই অংশ দিয়ে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন চলত। ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করায় নির্মিত হয় মির্জাপুর বাইপাস সড়ক। তবে রাতের বেলায় পুরোনো রাস্তা দিয়েই দেশের উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এরই মধ্যে মহাসড়কের এই অংশের বাইমহাটী এলাকায় লৌহজং নদের (বারখালী) ওপর থাকা পুরোনো সেতুটির পশ্চিম পাশের অংশ ভেঙে যায়। সেখানে বেইলি সেতু নির্মাণ করে সওজ।
যানবাহন নির্বিঘ্ন ও ঝুঁকিমুক্ত চলাচলের জন্য সেতুর পাশে নতুন করে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণের কাজ উদ্বোধন হয়। নির্মাণকাজ চলছে।
যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কের এই অংশটুকু প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয় সওজ। প্রায় দেড় মাস আগে দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন ঠিকাদার নির্বাচনের অপেক্ষা। ঠিকাদার নির্বাচন হলে শুরু হবে রাস্তা প্রশস্তকরণ। এ জন্য রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। গত সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে গাছ কাটার দৃশ্য। রাস্তার পাশে থাকা পুরোনো বড় বড় গাছসহ সব রকম গাছই কাটা হচ্ছে।
রাস্তার উত্তর পাশের গাছ কাটার কাজ পেয়েছে টাঙ্গাইলের সাবালিয়া এলাকার মামণি এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সোহেল রানা জানান, রাস্তায় সওজ ও বন বিভাগের গাছ রয়েছে। তিনি সওজের প্রায় ২১৫টি গাছ কাটার অনুমতি পেয়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দেখভালে নিয়োজিত মনির হোসেন জানান, রাস্তার পাশে মেহগনি, কড়ই, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছও রয়েছে।
জানতে চাইলে টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ খান বলেন, মহাসড়কের ওই অংশে আকাশমণি, ইউক্যালিপটাস, রেইনট্রি, অর্জুন, মিলঝিয়াম ও গামারসহ নানা প্রজাতির ১১৫টি গাছ রয়েছে, যা কেটে ফেলা হবে।
মির্জাপুর সওজ উপবিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, রাস্তাটি বর্তমানে ১৮ ফুট প্রশস্ত। রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহন চলে। জনযান চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তার দুই পাশে তিন ফুট করে প্রশস্ত করা হবে। এ জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে।
বেলা টাঙ্গাইলের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, যেকোনো সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প হাতে নিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো দিয়েই রাস্তার ডিভাইডার (বিভাজক) করতে পারে কিংবা রাস্তার এক পাশের গাছ কাটতে পারে। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশব্যবস্থা রক্ষা হয়। কিন্তু মির্জাপুরের ওই অংশে যেভাবে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তাতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে।