প্রথম কথা হলো, তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে মানুষের কল্যাণে, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী তাকে প্রযুক্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। তবে আমরা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সফলভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারিনি।
সরকার প্রতিবছর সাড়ে তিন কোটি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়। প্রতিবছর শিশুদের টিকা দেওয়া হয়। এই কাজগুলো সুচারুভাবে করতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা পয়সায় বই পৌঁছে দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষকেরা মাসের প্রথম সাত কর্মদিবসে কি তাঁদের বেতনটা পাচ্ছেন? শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিরাট সুযোগ রয়েছে।
প্রায়ই দেখি, বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক অনুপস্থিত। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে কিন্তু খুব সহজে প্রতিদিন উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির হিসাব রাখা যায়। বিমানের টিকিট বলেন, রেলের টিকিট বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিক্রি করে পুরো দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব।
দেশে ফৌজদারি মামলার একটা বড় অংশের উৎস জমি নিয়ে বিরোধ। ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করলে মামলা কমবে। বিচারব্যবস্থায় ভোগান্তি আর দুর্নীতি কমবে।
কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখা গেল, চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টম হাউসে কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কর ফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাস করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে হয়তো কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক হয়েছে, কিন্তু সেটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। দেশব্যাপী কাস্টমস দপ্তরগুলোর কোনো নিরবচ্ছিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক নেই।
আমাদের এখন সময় এসেছে সরকারের সার্বিক প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা। এসব প্রযুক্তি সহজলভ্য ও আহামরি ব্যয়সাপেক্ষও নয়। কিন্তু আমরা প্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যবহার করব, সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সবার আগে আসা প্রয়োজন।
প্রতিদিন কত রাজস্ব আদায় হলো, সেটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে পাওয়া উচিত। এটা কিন্তু কোনো জটিল প্রযুক্তি নয়, এটা রাজনৈতিক ইচ্ছার বিষয়।
সরকার সেচের জন্য বিদ্যুৎকে অগ্রাধিকার দেয়। একইভাবে কৃষকের পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তথ্যপ্রযুক্তি গুরুত্ব পেতে পারে। বাংলাদেশটা খুব ছোট। মহাসড়কগুলো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা কঠিন কিছু নয়। এটা হলে নিরাপত্তা বাড়বে, দুর্নীতি বন্ধ হবে।
আমার জানামতে, বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে বিশেষ শ্রেণির নির্দিষ্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাদে অন্যরা ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে না।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করছে। সরকারের উচিত ছিল, প্রতিটি উপজেলাকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে সংযুক্ত করার দায়িত্ব ওই কোম্পানিগুলোকে দেওয়া। সেটা না করে সাধারণ মানুষের করের টাকায় অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হচ্ছে।
ফলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিনিয়োগ বলতে আছে শুধু কিছু সার্ভার। তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো শুধু মুনাফা নিয়ে যায়, সমাজের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। উচিত ছিল, ডিজিটাল অবকাঠামো তাদের দিয়ে তৈরি করানো এবং আইন করে সেগুলো সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা। এতে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) সংখ্যা বাড়ত, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দাম কমত।
সবশেষে বলি ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে। এখন মানুষের তথ্যের ক্ষুধা অত্যন্ত প্রবল। সরকার তথ্যের প্রবাহে বাধা দিলে গুজব সেই জায়গা নিয়ে নেয়। এতে সরকার ও সমাজের জন্য হিতে বিপরীত হয়।
(লার্ন এশিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে গবেষণা করে)