এক পা সম্বল করেই ফজলুরের স্বপ্নযাত্রা
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার চর গোপালপুর গ্রামের সাহেব আলীর সংসারে জন্ম নেয় ফজলুর রহমান। কিন্তু শিশুটিকে দেখে সবাই অবাক। তার দুটি হাত ও একটি পা নেই। তবু বাবা-মায়ের আদরে বড় হতে থাকে সে। গতকাল সোমবার সেই বাড়িতেই আবার আনন্দের ঢেউ। সেই দুই হাত ও এক পা ছাড়া ফজলুর রহমান এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে। সে উপজলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের মিটুয়ানী উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৩ দশমিক ৫৬ পেয়েছে।
এক পায়ে ভর করে ফজলুর প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। দুই হাত আর এক পাবিহীন জীবনে সে সৃষ্টি করেছে অনন্য এক নজির। ফলাফল প্রকাশের পর ফজলুর রহমান বলে, ‘পড়ালেখার জন্য আমি অনেক কষ্ট করছি। পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেয়ে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার আশা করি।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সে আরও বলে, ‘বোন বই বহন করে নিয়ে যেত আর আমি লাফিয়ে লাফিয়ে চলতাম। যেদিন বোন স্কুলে যেত না সেদিন আমারও স্কুলে যাওয়া হতো না। বৃষ্টি হলেও একই অবস্থা হতো। আমার সব কাজ মা করে দেন। মা আর বোনের সহায়তায় এই ফল করতে পেরেছি।’
ফজলুর রহমানের বাবা সাহেব আলী বলেন, ছেলের ফলাফলে তাঁর মন ভরে গেছে। অভাব-অনটনের সংসার, ঠিকমতো বইও কিনে দিতে পারেননি। মা সারা খাতুন বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী লেখাপড়া জানি না। ছেলেটার ভীষণ ইচ্ছাশক্তির জোর। ছোট মেয়ে আসমা ফজলুকে লেখাপড়া করায়। সঙ্গে করে স্কুলে নিয়ে যায়। ও যত দিন পারে, আমরা পড়ালেখা করাব।’ তবে প্রতিবন্ধী ছেলেটার দিকে সবাই একটু তাকালে তাঁদের উপকার হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিটুয়ানী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ভীষণ পরিশ্রমী ফজলু। যার প্রমাণ তার পড়ালেখায় পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় সমাজকর্মী মামুন বিশ্বাস বলেন, ফজলুর রহমানকে সহায়তা করা গেলে একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। এ জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।