নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের কাহিনি জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন ও ধারণ করে নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে। কাজে-কর্মে, চিন্তাচেতনায় দেশপ্রেম থাকতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে এসে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন কথা বললেন একাত্তরে সশস্ত্র সংগ্রামের সম্মুখযোদ্ধা ও চিকিৎসক আরশাদ সায়ীদ। তাঁর মুখে রণাঙ্গনের নানা কাহিনি বিভোর হয়ে শুনল শিক্ষার্থীরা।
মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয় যোদ্ধাদের স্মরণে গতকাল রোববার বগুড়া জিলা স্কুল মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হয়। ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এতে সহযোগিতা করে বগুড়া জেলা প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের নানা কাহিনি শোনান বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পালিয়ে যান। বাবা-মাকে না জানিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ভারতে গিয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে অবস্থান নেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায়। সেখান থেকে একের পর এক সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধ এবং গেরিলা হামলায় অংশ নেন আরশাদ। বগুড়া শহরের সাবগ্রাম এলাকায় রেললাইনে মাইন পেতে ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, চেলোপাড়া-সারিয়াকান্দি সড়কে মাইন পেতে জিপগাড়ি উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা হত্যাসহ নানা দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেন এই সশস্ত্র যোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ একাত্তরের অগ্নিঝরা রণাঙ্গনের বীরত্বগাথা বিভিন্ন গল্প যখন শোনাচ্ছিলেন, তখন জিলা স্কুল মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নীরবতা। তেজোদীপ্ত লড়াই-সংগ্রামের গল্প শুনে কখনো শিহরিত হচ্ছিল, কখনো মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনি শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছিল শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুফিয়া নাজিম। স্বাগত বক্তব্য দেন বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক হাবিব।