বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার জন্য ব্র্যান্ডিংয়ের ওপর জোর দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়ে। তাঁর মতে, অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য, প্রবৃদ্ধি, তরুণ জনগোষ্ঠী, বাংলাদেশের অতিথিপরায়ণ জনগণের উষ্ণতা আর তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণির মতো অনেক শক্তির দিক আছে।
আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ডিকাব টকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন হ্যারি ভারওয়ে।
ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুরুতে বক্তৃতা করেন হ্যারি ভারওয়ে। এরপর নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
ডিকাব সভাপতি রাহীদ এজাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন নুরুল ইসলাম হাসিব।
ব্র্যান্ড বাংলাদেশকে কীভাবে ঢেলে সাজানো উচিত? জানতে চাইলে হ্যারি ভারওয়ে বলেন, ‘আপনারা যদি বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে তুলে না ধরেন, তবে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর কোনো সুযোগ আমি পাব না। এ দেশের বিপুল সম্ভাবনা আছে। এটাকে আপনাদের তুলে ধরতে হবে, বিশ্বের কাছে জানাতে হবে। কাজটা জটিল কিন্তু দুঃসাধ্য নয়।’
লিখিত বক্তৃতায় নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারওয়ে বলেন, ‘বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে আমাদের অবশ্যই অন্যদের মতপ্রকাশের এবং ভিন্নমতের সুযোগ করে দিতে হবে। সত্য নিয়ে কিংবা অন্যের বার্তা নিয়ে কারও মন খারাপ করা উচিত নয়। গণমাধ্যম গণতন্ত্রকে কার্যকর করে। নেদারল্যান্ডসে আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া, অবাধে তর্ক করার সুযোগ দেওয়া এবং নাগরিক সমাজের সমর্থনে কাজ করছি। কারণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সরাসরি মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার মতো মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্রের উন্নতির জন্য আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকব।’
বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত বলে একটি ছাড়া অন্যটি সম্ভব নয়। নেদারল্যান্ডস মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিশেষ জোর দিয়ে থাকে। তাই আপনাদের সাহসী হওয়া উচিত নিজেদের অধিকার ও সত্য তুলে ধরার স্বার্থে।’
বিএনপির নেতাদের সংসদে শপথ নেওয়া এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে হ্যারি ভারওয়ে বলেন, ‘যখন কেউ সংসদে নির্বাচিত হন, তা যে দল থেকেই হোক না কেন, আপনাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কারণ, এটা তো জনগণের দিক থেকে বিবেচনা করা উচিত বলে আমার বিশ্বাস।’ নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যার উন্নতি হওয়া উচিত, যা সরকার বিবেচনা করবে বলে তাঁর বিশ্বাস।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কাজে সমস্যা তৈরি করবে কি না, জানতে চাইলে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত জানান, হেগে অবস্থিত আইসিসি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত। আইসিসি রোহিঙ্গা নৃশংসতা নিয়ে তদন্ত ও বিচার করছেন। তাঁরা স্বাধীনভাবেই এই বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়। তবে বিচারপ্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের ভূমিকা ইতিবাচক। হ্যারি ভারওয়ে বলেন, বাংলাদেশের বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডস সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।