আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার নয়
>• অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার
• হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হলেও তা শেষ পর্যন্ত আরও ক্ষতি করে
• আগুন আরও ছড়ায়
আগুন নেভানোর কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করলে বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। হেলিকপ্টারের ব্লেড যখন ঘুরতে থাকে অর্থাৎ রোটারিংয়ের সময় উৎপন্ন বাতাস আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়ে আগুন নেভাতে ও জরুরি উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এখন থেকে সাধারণ কোনো হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হবে না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ব্যবহারে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানালে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, রাজধানী বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভাতেও বাধা সৃষ্টি করেছে হেলিকপ্টারগুলো। হেলিকপ্টারের প্রচণ্ড বাতাসের কারণে উদ্ধারকার্য বিঘ্নিত হয়েছে। এর ফলে আগুন নেভাতেও দু-তিন ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছে।
তবে খুব বেশি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বিশেষ হেলিকপ্টার কেনা যায় কি না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানতে চাললে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ হেলিকপ্টার আগুন নেভাতে বাধা সৃষ্টি করে। এই অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভানোর ঘটনার সময়। ওই সময় হেলিকপ্টারের বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে গিয়েছিল। তাই পরবর্তী কোনো অগ্নিদুর্ঘটনায় যেন সাধারণ হেলিকপ্টার ব্যবহার না করা হয় তার পরামর্শ দিয়েছি। এ ছাড়া আমি বিশেষ হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলেছি, যা দিয়ে উদ্ধার এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ দুটোই হবে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, হেলিকপ্টার হোভারিংয়ের (স্থির অবস্থায় আকাশে উড্ডয়ন করার ক্ষমতা) সময় নিম্নভাগে বাতাসের গতিবেগ থাকে ৬৯ থেকে ১১৫ মাইল, ঘণ্টা। বাতাসের এই চাপ দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যেতে সহায়তা করে। এর ফলে আগুনের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে পাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। আবার আগুন নেভাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের মই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে উত্তোলন করে তা বাতাসের গতিবেগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থির করা হয়। কিন্তু হেলিকপ্টার থেকে উৎপন্ন নিম্নগামী ঘূর্ণমান ও গতিশীল বাতাসের কারণে ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এতে এমনকি নতুন করে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তা ছাড়া হেলিকপ্টার থেকে বাম্বি বাকেটের মাধ্যমে নিক্ষিপ্ত পানি আগুন নেভাতে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন থেকেই বলছি, আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে সময়ক্ষেপণ হয়, দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বাড়ে। কেবল বনের আগুন নেভাতে হলে ঠিক আছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বনানীতে ২২ তলা এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মারা গেছেন ২৬ জন। আহত হন ৭৩ জন।