ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নিজ বাসা থেকে রুহুল আমিনকে আটক করা হয় বলে অভিযোগ করছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা। তবে শুরুতে পিবিআই এই অভিযোগকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দেয়।
নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি উম্মে সুলতানা পপি (ছদ্মনাম শম্পা) শুক্রবার বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিষয়টি নিয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে আদালত চত্বরে ব্রিফ করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মঈন উদ্দিন। এই প্রেস ব্রিফিংয়েই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি রুহুল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পিবিআই আটক করেছে বলে নিশ্চিত করেন। মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, আটকের পরই রুহুল আমিনের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে।
যেভাবে নাম এল রুহুলের
গত রোববার ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম। জবানবন্দি শাহাদাত বলেন, নুসরাতের শরীরের আগুন দেওয়ার পর তিনি রুহুল আমিনকে বিষয়টি মোবাইলে জানান। তখন রুহুল আমিন তাঁকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি তোমরা চলে যাও।’ মূলত, শাহাদাতের জবানবন্দির পর থেকে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রুহুলের যোগসাজশ আছে, এমন অভিযোগ জোরালো হতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারে রুহুল আমিনের নাম নেই।
রুহুল আমিন ওই মাদ্রাসার সদ্য বাতিল হওয়া পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কাছের মানুষ বলে এলাকায় পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, শ্লীলতাহানি, আর্থিক অনিয়মসহ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন সময়ের অভিযোগের ক্ষেত্রে রুহুল নির্লিপ্ত ছিলেন।
এলাকারবাসীর আরও অভিযোগ, শ্লীলতাহানির মামলায় গত ২৭ মার্চ যখন অধ্যক্ষ কারাগারে যান, তখন রুহুল আমিনের লোকজন প্রতিবাদকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ২৮ ও ২৯ মার্চ তাঁর লোকজন অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
রুহুল ছাড়া নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৮ আসামিসহ ১৮ জন গ্রেপ্তার আছেন। এঁদের মধ্যে ৫ জন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড আছেন ১২ জন।
রুহুল আটক
রুহুল আমিনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে পরিচিত উপজেলা যুবলীগের সদস্য আবদুল হালিম সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দুজন সাদাপোশাকের লোক রুহুল আমিনের বাসায় যান। সে সময় তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ওই ব্যক্তিরা তাঁকে ঘুম থেকে ডেকে ওঠান এবং মোবাইল ফোনে কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এরপর সাদা ও সিলভার কালারের দুটো মাইক্রোবাস তাঁর বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। মাইক্রোবাসগুলোতেও লোক ছিল। পরে তাঁরা তাঁকে ওই মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ফেনীর দিকে নিয়ে যান।’
আবদুল হালিম জানান, ঘটনার সময় তিনিসহ উপস্থিত কয়েকজন ওই দুই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। তখন তাঁরা নিজেদের পিবিআইয়ের সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘ওনাকে (রুহুল আমিন) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হবে।’