গুরুদাসপুরে ধানে চিটা, দুশ্চিন্তায় কৃষক
ধানখেতে সবে শিষ গজিয়ে উঠেছে। ‘অজ্ঞাত রোগে’ চিটা হয়ে যাচ্ছে এসব ধানের শিষ। এই চিত্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায়। এতে কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাঁরা বলছেন, ২ এপ্রিলের ঝড়ের পর থেকে ধানখেতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কৃষি বিভাগের লোকজনও প্রতিকার করতে পারছেন না।
এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, দিনে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্য এবং ঝোড়ো বাতাসের কারণে ধানের গাছ থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পানি বেরিয়ে গেলে ফুলের অঙ্গ গঠনে বাধা পায়। এ ছাড়া পরাগায়ন, গর্ভধারণ ও ধানের মধ্যে চালের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এ কারণে ধানের থোড় বা শিষের রং বদলে গিয়ে চিটায় পরিণত হয়। এ সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। তাঁরা সরেজমিনে এসে পরামর্শ, করণীয় ঠিক করবেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ বছর উপজেলার ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে কৃষি বিভাগ অনুসন্ধান করে ৪৯৬ হেক্টর জমিতে (আংশিক) কৃষকের এমন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে।
গত রোববার উপজেলার চলনবিল–অধ্যুষিত পিপলা, বিলশা মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ধানের শিষগুলো খেতের মধ্যে কালো, সাদা ও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। আবার কোথাও কোথাও শিষগুলো পরিপক্ব হয়ে সোনালি আকার ধারণ করেছে।
পিপলা গ্রামের কৃষক রতন আলী বলেন, ধারদেনা করে ১০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলেন। পরিচর্যার পর বুকটা ভরে গিয়েছিল। কিন্তু ঝড়ের পর থেকে তাঁর অর্ধেক অংশজুড়ে শিষের রং বদলে চিটা হয়ে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি।
একই মাঠের আরেক কৃষক আবু তাহের ১৪ বিঘা ও আবদুল হামিদ ২২ বিঘা জমিতেও একই চিত্র। তাঁরা জানান, সঠিক পরামর্শ না পাওয়ায় ওষুধও প্রয়োগ করা যাচ্ছে না।
উপজেলার নাজিরপুর এলাকার কৃষক আবদুস সালাম মোল্লা ও মহসীন আলী বলেন, গেল ১০ বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েননি কৃষক। এবার ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। থাকলেও হঠাৎ রোগের কারণে কৃষকের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাঁদের ভাষ্যমতে, চলনবিলের অন্য উপজেলাগুলোতেও কম–বেশি একই রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে চলনবিলের কৃষি ও কৃষকদের।