অগ্নিদগ্ধ মেয়েটিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো যাচ্ছে না

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাদ্রাসাছাত্রী। ঢাকা মেডিকেল, ০৬ এপ্রিল। ছবি: আহমেদ জায়িফ
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাদ্রাসাছাত্রী। ঢাকা মেডিকেল, ০৬ এপ্রিল। ছবি: আহমেদ জায়িফ

ফেনীর সোনাগাজীতে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ থাকায় তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে তিনি জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা মেয়েটিকে আকাশপথে পরিবহনে ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন।

অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে আজ সকাল সাড়ে আটটায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের।

কনফারেন্সের পর অধ্যাপক আবুল কালাম প্রথম আলোকে জানান, মেয়েটির ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ রয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, ফুসফুসে সংক্রমণ থাকায় এ মুহূর্তে মেয়েটিকে আকাশ পথে পরিবহনে ঝুঁকি রয়েছে। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। তারা প্রতিদিন মেয়েটির চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করবেন। গতকাল সন্ধ্যায় মেয়েটির শারীরিক অবস্থার সমস্ত প্রতিবেদন সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। এ ছাড়া তার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত সময়ে সময়ে অবহিত করা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের।

এর আগে দেশের চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, অগ্নিদগ্ধ মেয়েটির বুক-পিঠ পুড়ে এমনভাবে ভেতরের দিকে ঢুকে গেছে যে ফুসফুস ওঠানামা করতে পারছে না। তাঁরা দুই পাশে অস্ত্রোপচার করার একটা পরিকল্পনা করেছিলেন, যেন ফুসফুসটা ঠিকমতো কাজ করতে পারে। কিন্তু তার আগেই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।

আজ অধ্যাপক আবুল কালাম জানান, ফুসফুস যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে, সে লক্ষ্যে আজ অস্ত্রোপচারটি করা যেতে পারে।


অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীর অবস্থা খুবই সংকটজনক। গতকাল সোমবার তাঁকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় (লাইফ সাপোর্ট) রাখা হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে মেয়েটি তাঁকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত একজনের নাম বলেছেন। দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে দেওয়া বক্তব্যে ছাত্রীটি বলেন, এ ঘটনায় চারজন অংশ নেন। এঁদের অন্তত দুজন নারী, একজনের নাম ‘শম্পা’। নেকাব, বোরকা, হাতমোজা পরা ছিল হামলাকারীদের।

মেয়েটির ভাই মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজীর ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা আলিম পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেবেন বলে তাঁর বোনকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। ওই দিনই তাঁদের মা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেন। তখন থেকেই তাঁদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ৬ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে তাঁর বোন আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান। এরপরই বোরকা পরা একটি মেয়ে তাঁকে জানান, নিশাত নামের এক বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। খবর পেয়ে তিনি মাদ্রাসার ভেতরের সাইক্লোন শেল্টারে তৃতীয় তলার ছাদে যান। সেখানে তাঁর বোনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।