গর্ত ভরাটে সেতুর বারোটা
কোনো সেতু বা স্থাপনার ৫০০ গজের মধ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন সরকারিভাবেই পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তারপরও রাজশাহীর বাগমারায় নিজেদের তৈরি করা সেতুর নিচ থেকে বালু তুলছে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এক মাসের বেশি সময় ধরে তারা এ কাজ করছে। এতে সেতুটিসহ আশপাশের স্থাপনাও হুমকির মুখে পড়ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে উপজেলার খাজাপাড়া-বাগমারা সংযোগ সড়কের ফকিন্নি নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়। গত ২০০১ সালে প্রায় ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি সেতুটি নির্মাণ করেছে। সেতুর নিচে ফকিন্নি নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে বালু তুলে বাগমারা থানার পাশের গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। সেতু থেকে ১০-১৫ গজ দূরেই বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিন। এভাবে মেশিন দিয়ে বালু তোলায় সেতুর আশপাশের জমিতে ধসের সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেজার মেশিন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত তিনজন শ্রমিক বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তাঁরা এখান থেকে বালু তুলে গর্ত ভরাট করছেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন এসব শ্রমিক।
বাগমারা উপজেলা এলজিইডি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাগমারা থানাসংলগ্ন বিশাল গর্তটি ভরাট করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই গর্ত ভরাটের কাজ শুরু করা হয়।
স্থানীয় অন্তত অর্ধশত লোক বলেন, সেতুর নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করায় তাঁদের জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। বাগমারা থানার পুলিশ কাজটি করছে মনে করে তাঁরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি। তবে এভাবে সেতু, স্থাপনা ও জমি হুমকির মুখে ফেলে বালু তোলা ঠিক হচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেন তাঁরা। এভাবে বালু তোলা হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘এলজিইডি জেনেবুঝেও কীভাবে নিজের পায়ে কুড়াল মারছে, বুঝতে পারছি না।’ এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড্রেজার মেশিনের পরিচালক খোকা বাবু মুঠোফোনে গতকাল প্রথম আলোর কাছে মাসাধিককাল ধরে সেতুর নিচ থেকে বালু তোলার কথা স্বীকার করে বলেন, সেতুর নিচ থেকে মেশিন দিয়ে বালু তোলা যাবে না, এমন কোনো কথা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ তাঁকে বলেনি। এই কাজের জন্য তিনি নিয়মিত উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে টাকা পাচ্ছেন বলে জানান। সেতুর নিচ থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করা হলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে জানালে তিনি বলেন, এটা তো সরকারি কাজ।
গতকাল বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সেতুর নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা যাবে না। এটা করা হলে ওই স্থানে শূন্যতার সৃষ্টি হয়ে ধসে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাহলে বাগমারায় সেতুর নিচ থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জানালে উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। বিষয়টি দেখার জন্য একজন সহকারী প্রকৌশলীকে ডেকে পাঠান তিনি।