ভবন নির্মাণে পদে পদে নকশার ব্যত্যয়
নগরজুড়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সুউচ্চ ভবন পরিদর্শন করছে। নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হয়েছে কি না এবং অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকভাবে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে রাজউকের দল। পরিদর্শনের সময় বেশির ভাগ ভবনে রাজউক অনুমোদিত নকশার গরমিল এবং অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থায় দুর্বলতা পাচ্ছে পরিদর্শনকারী দল।
গতকাল মঙ্গলবার ছিল রাজউকের উঁচু ভবন পরিদর্শনের দ্বিতীয় দিন। রাজউকের আটটি অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে গঠিত ২৪ দল এই পরিদর্শনের কাজ করছে। দলগুলো নকশানুযায়ী ভবনের বিভিন্ন তথ্য নথিভুক্ত করছে। কোনো কোনো অঞ্চলে পরিদর্শন চলছে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বহুতল ভবন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৫ দিনের মধ্যে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ১০ তলার ওপরের ভবনগুলোর পরিদর্শনকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।
ধানমন্ডিতে পরিদর্শন শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। রাজউক অঞ্চল-৫-এর পরিচালক শাহ আলম চৌধুরী সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তাঁর অঞ্চলে ১৪টি ভবন পরিদর্শন করা হয়েছে। তাঁরা উঁচু ভবনগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছেন। তথ্য সংগ্রহের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে কোন ভবনে কী ব্যত্যয় ঘটেছে, তা জানানো হবে। ত্রুটি পাওয়া ভবনগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা নিয়ে পরে ব্যবস্থা নেবে রাজউক। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা হয় এমন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে তাঁরা ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। আর পরবর্তী বড় সমস্যাগুলোর জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেলা ১১টার দিকে রাজউক অঞ্চল-৫–এর তিনটি দল পরিদর্শন শুরু করে। প্রথমে ৫৮/বি, সাতমসজিদ ঠিকানার আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের একটি ভবনে যায় পরিদর্শক দল। ভবনটি আবাসিক হলেও এর নিচে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে শনাক্ত করেছেন রাজউকের কর্মকর্তারা।
এরপর ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিন্দ্র কুমার নাথের মালিকানাধীন একটি ১৪ তলা ভবন পরিদর্শনে যায় রাজউক দল। ভবনটি নির্মাণে সব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্রের কাগজ থাকলেও নকশা অনুযায়ী নির্মাণে গরমিল পায় রাজউক দল। ভবনটির ফায়ার ডোর নির্মাণের জায়গা রাখা হয়নি এবং জরুরি বহির্গমনের সিঁড়ির নকশায় যতটুকু পরিমাপ থাকার কথা, তা পাওয়া যায়নি। ভবনটির প্রজেক্ট ইনচার্জ আবু আলম অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ভবনটি নির্মাণে সব কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র আছে। নকশা অনুযায়ী তাঁরা ভবনটি তৈরি করেছেন।
ধানমন্ডির ১৫ নম্বরের সড়কে কেবি স্কয়ার ভবনে ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানসহ ২৮টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। ভবনটি ব্যবহারের সনদ (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) নেই ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে। পার্কিংয়ের জায়গা আংশিক দখল করে ভবনের জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। বেসমেন্টে গিয়ে দেখা যায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার রাখা। বিভিন্ন অব্যবহৃত কাঠের পণ্য, চেয়ার, প্লাস্টিক পণ্য স্তূপ করে রাখা। এক পাশে টিন দিয়ে ঘর করে নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার ঘর। রাজউক দল এই ঘর তুলে দিয়ে বেসমেন্ট পরিষ্কার করার নির্দেশ দেয়।
কেবি স্কয়ার ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ফায়ার হাউস র্যাক ও ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণযন্ত্র) পাওয়া যায়। সেগুলোর মেয়াদের স্টিকারে দেখা যায়, এক দিন আগে ১ এপ্রিল যন্ত্রগুলো বসানো। তবে যন্ত্রগুলোর গায়ে এক পরত ধুলো জমা। ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানায়, ‘আড়াই মাস আগে এগুলো বসানো হয়েছে। এগুলোর মেয়াদ বা কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, আমরা জানি না।’
এদিকে রাজউক অঞ্চল-৮-এর পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল আরেফিন প্রথম আলোকে জানান, তাঁর অঞ্চলে ৩টি দল নারায়ণগঞ্জের বিবি রোড, নিতাইগঞ্জ, চাষাঢ়া, ফতুল্লা কালীবাড়ি এলাকায় বিভিন্ন উঁচু ভবনের তথ্য সংগ্রহ করে। রাজউক অনুমোদিত নকশা মিলিয়ে বেসমেন্ট পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করা, র্যাম্পের খারাপ অবস্থা, অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা না রাখাসহ বেশ কিছু ভবনের ব্যত্যয় পায় রাজউক। রাজউক পরিচালক মাকসুদুল আরেফিন বলেন, ভবনগুলোতে ব্যবস্থা নিতে সময় ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।