শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙন রোধে নেওয়া প্রকল্পের চর খননকাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। পদ্মা নদীর নড়িয়ার তীরের বিপরীত পাশে বসাকেরচর এলাকায় গতকাল শুক্রবার এ কাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক। নদীর তীব্র স্রোত নড়িয়ার তীর থেকে সরিয়ে নিতে ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই চর খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চর খননের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড প্রকল্প এলাকায় চারটি খননযন্ত্র এনেছে।
উদ্বোধনের সময় উপমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী, পাউবোর প্রধান সমন্বয়ক কাজী তোফায়েল, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল হেকিম এবং প্রকল্প পরিচালক প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার।
পাউবো সূত্র জানায়, গত বছর বর্ষা মৌসুমে নড়িয়ার আট কিলোমিটার এলাকায় প্রবল ভাঙন হয়। এতে ওই এলাকার সাড়ে ছয় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় তিনটি বাজার, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন, পাকা সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা। নড়িয়া-জাজিরার ভাঙন রোধ করার জন্য সরকার গত বছরের জানুয়ারিতে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। ওই প্রকল্পে নদীর ডান তীর রক্ষা ছাড়াও চর খনন করার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করে নদী খননের নকশা তৈরি করে।
এরই মধ্যে বর্ষা মৌসুমের পর নড়িয়ার তীরের কাছে নতুন চর জেগে ওঠে। এই অবস্থায় খনন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তখন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ও পাউবোর মরফোলজি বিভাগ নতুন করে গবেষণা শুরু করে। এ নিয়ে ‘পড়েছে নতুন চর, নড়িয়ায় এবারও ভাঙনের আশঙ্কা’ ও ‘নতুন চর পড়ায় খনন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পাউবো সূত্র জানায়, নড়িয়া ও জাজিরার পদ্মার তীরের বিপরীতে জেগে ওঠা চরটির ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার খনন করা হবে। খননকাজে ছয়টি খননযন্ত্র ব্যবহার করা হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ওই এলাকা থেকে ৬০ লাখ ঘনমিটার বালু অপসারণ করা হবে। এই প্রকল্পে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ২৩ হাজার ঘনমিটার বালু অপসারণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৫২২ কোটি টাকা। পাউবো খননকাজের জন্য নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল হেকিম বলেন, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের নকশার আদলে তাঁদের চিহ্নিত করা জায়গার পাশ দিয়ে খনন করা হবে। গত বর্ষা মৌসুমের পর জেগে ওঠা চরটিই আপাতত খনন করে অপসারণ করা হচ্ছে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বর্ষার আগে ভাঙন রোধ করা হবে। ভাঙন রোধ করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নদীর তীর রক্ষার কাজের পাশাপাশি নদীর চর খননের কাজও শুরু করা হলো। তিনি আরও বলেন, ‘কাজটি যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়, সে জন্য প্রতি সপ্তাহে আমি নিজে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করছি। নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।