জেরায় অপ্রস্তুত পুলিশ কর্মকর্তা

হোলি আর্টিজান
হোলি আর্টিজান

গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মামলা রেকর্ড করেছিলেন গুলশান থানার তৎকালীন পরিদর্শক মো. সালাউদ্দীন মিয়া। গতকাল বুধবার জেরায় তাঁকে কিছুটা অপ্রস্তুত হতে হয়। বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারেননি।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ জেরা শেষে উপসংহারে দাবি করেছেন, হোলি আর্টিজান বেকারির বাইরে থেকে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর ছোড়া গুলিতে ভেতরে থাকা দেশি-বিদেশি অতিথিরা নিহত হন। সরকারপক্ষের সাক্ষীরা মিথ্যা বলছেন। মো. সালাউদ্দীন মিয়া জোরের সঙ্গে বলেন, তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন, মিথ্যা বলেননি।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলার ২৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল মো. সালাউদ্দীন মিয়াকে উপস্থাপন করে। সালাউদ্দীন আদালতকে বলেন, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে তাঁরা প্রথম গুলশানের হোলি আর্টিজানে হামলার খবর পান। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে উপপরিদর্শক ফারুক হোসেনকে দেখতে পান। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) অন্য সদস্যরা আসেন। হোলি আর্টিজানের ভেতর থেকে তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলেন। এ সময় পুলিশের ‘মোবাইল টিম’ ও অন্যরা হোলি আর্টিজানের আশপাশে অবস্থান নেন। রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে অবস্থানের সময় ভেতর থেকে গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে গুলশান থানার ওসি ও অন্য সদস্যরা আহত হন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বনানী থানার ওসি সালাউদ্দীন এবং এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার রবিউল হকের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। এ সময় ডিপ্লোম্যাটিক জোনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, র‍্যাব ও অন্যরা মিলে হোলি আর্টিজান ঘেরাও করে ফেলেন। পরদিন সকালে প্যারা কমান্ডোরা হোলি আর্টিজানের ভেতরে থাকা জিম্মিদের উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। সন্ত্রাসীরা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে। প্যারা কমান্ডো বাহিনীর অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হন।

হোলি আর্টিজানে হামলায় অভিযুক্ত আট আসামির তিনজনের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ মো. সালাউদ্দীন মিয়ার কাছে জানতে চান, আইন অনুযায়ী জব্দ তালিকা তৈরির পরদিনই প্রথম ডাকে হাকিমের কাছে পাঠানোর কথা। তিনি কি তা করেছিলেন? আলামত কোথায় ছিল? জবাবে সালাউদ্দীন জানান, তিনি পাঠাননি। তাঁরা সবাই থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থানার দায়িত্বে কে ছিলেন, সেটাও বলতে পারেননি তিনি। তা ছাড়া তিনি পুলিশ কর্মকর্তা সালাউদ্দীনকে বলেন, ১ জুলাই রাতে চায়নিজ রাইফেল থেকে চারটি, এসএমজি থেকে ১২টি, শটগান থেকে ১১২টি, পিস্তল থেকে ২৫টি গুলি ছোড়া হয়। কার অস্ত্র থেকে কতটি গুলি ছোড়া হয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি। সে সম্পর্কে তিনি জানেন কি না। জবাবে সালাউদ্দীন বলেন, হিসাব আছে, তবে তাঁর কাছে নেই। তখন ফারুক আহম্মেদ বলেন, বাইরে থেকে পুলিশের ছোড়া গুলি ও বোমায় হোলি আর্টিজানের ভেতরে থাকা লোকজন নিহত হয়েছেন। সালাউদ্দীন মিথ্যা বলছেন। সাক্ষী আইনজীবীর এই দাবি অসত্য বলে জানান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে আইএসপন্থী জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি হামলা চালায়। এতে পুলিশ ও দেশি-বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন নিহত হন। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও বেকারির পাচক নিহত হন। এ ঘটনায় জীবিত যে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের সবাই কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ৩ এপ্রিল।