প্রতারিত হয়ে নিজেই খোঁজ দিচ্ছেন খাঁটি মধুর
মধু কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন। খাঁটি বলে দেওয়া হয় ভেজাল মধু। এরপর থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্য মাঠে নেমেছেন তিনি। পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর মধু ব্যবসায়ী। তাঁর নাম সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার।
মধু বিক্রি ও গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারে গড়ে তুলেছেন আলওয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিসিক চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মেলায় স্টল দিয়েছে আলওয়ান। গত মঙ্গলবার এ মেলা শুরু হয়। চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে বিসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মেলায় কথা হয় সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ারের সঙ্গে। ২০ বছর আগে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে একটি পোশাক কারখানায় কর্মজীবন শুরু করেন তিনি।
১২ বছর আগে অসুস্থ বাবার জন্য মধু সংগ্রহ করে বাসায় এনে টের পান তিনি ঠকেছেন। এরপর থেকে মধু নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন এলাকার মধু সংগ্রহকারী ও খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংগ্রহ ও চাষ পদ্ধতি জেনে নেন। ছুটে যান সুন্দরবনসহ দেশের নানা জায়গায়। এখন ফেসবুকে লেখালেখি করছেন। যাচ্ছেন বিভিন্ন মেলায়। সেখানে দর্শনার্থীদের সামনে মধু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করছেন।
বাজারে দুই ধরনের ভেজাল মধু পাওয়া যায় বলে জানান মঈনুল আনোয়ার। তিনি বলেন, একটিতে মধুর কোনো অংশই নেই। চিনির সিরা, পটাশ এলাম ও হানি এসেন্সের (সুগন্ধি) রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে এই নকল মধু তৈরি করা হয়। আবার অল্প পরিমাণ ভালো মধুর সঙ্গে নকল মধু মিশিয়ে আরেক ধরনের ভেজাল মধু তৈরি করা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ঠকানোর জন্য এই মধু আগুনে জ্বেলে এবং পানিতে ঢেলে পরীক্ষা করে দেখান। ক্রেতারা এতে বিভ্রান্ত হন। কিন্তু এগুলো নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় গামলায় মৌচাক নিয়ে ফেরি করে মধু বিক্রি করা হয়। এই মধু বিশুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
নকল ও ভেজাল মধু কীভাবে চেনা যাবে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নকল মধু একই রকম রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। সব ঋতুতে এর স্বাদ ও ঘ্রাণ প্রায় একই রকম থাকে। নকল মধুতে পরাগরেণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কিন্তু ফুল ও ঋতু ভেদে আসল মধুতে স্বাদ ও ঘ্রাণের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। পরাগরেণুও থাকে।
বিসিক আয়োজিত মেলায় নানা ধরনের মধু নিয়ে এসেছেন চট্টগ্রামের সন্তান মঈনুল আনোয়ার। তাঁর স্টলে আছে আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানিসহ পাঁচ দেশের মধু। আছে সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা মধু। রাখা হয়েছে সরিষা, বরই, ধনিয়া, খেসারি, লিচু ও কালিজিরা ফুল থেকে তৈরি মধু। এসব মধুর দাম কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা।