চাঁদার বোঝা যাত্রীর ঘাড়ে
মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান থেকে শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচলকারী লেগুনার ভাড়া হুট করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ছেন যাত্রীরা। ভাড়া নিয়ে চালক–সহযোগীদের সঙ্গে যাত্রীদের প্রায়ই বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে।
যাত্রীরা বলছেন, অন্য যানবাহন না থাকায় তাঁরা লেগুনায় চড়তে বাধ্য হন। গ্যাস কিংবা ডিজেলের দাম বাড়েনি। তবু দুই সপ্তাহ ধরে লেগুনার ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উদ্যান থেকে শ্যামলী বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া আগে ছিল ১২ টাকা। তা বাড়িয়ে ১৫ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা উদ্যান থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত ভাড়া পাঁচ টাকা ছিল। তা বাড়িয়ে আট টাকা করা হয়েছে।
চালকেরা বলছেন, প্রতিদিন তাঁদের মালিক সমিতিকে নির্ধারিত পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়। সম্প্রতি চাঁদার হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গতকাল রোববার দেখা যায়, শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে দুই সারিতে ২০টি লেগুনা দাঁড়িয়ে। যাত্রীর চাপও বেশ। এককেকটি লেগুনার আসন চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শ্যামলী-ঢাকা উদ্যান রুটের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই পথে ভোর ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লেগুনা চলাচল করে। শ্যামলী থেকে আদাবর, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শিয়া মসজিদ হয়ে ঢাকা উদ্যান পর্যন্ত চলাচল করে লেগুনাগুলো।
এক বছর ধরে এই রুটে লেগুনা চালাচ্ছেন ইয়াছিন। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে দিনে লেগুনাপ্রতি ১২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সপ্তাহ দু–এক আগে চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হয়েছে। তাই ভাড়া না বাড়িয়ে তাঁদের কোনো উপায় ছিল না।
একেকটি লেগুনায় আসন থাকে চৌদ্দটি। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার আগে একবার যাওয়া–আসায় একটি লেগুনা গড়ে ভাড়া আদায় হতো ৩১০ টাকা। ভাড়া বাড়ানোয় এখন প্রতি ট্রিপে আয় হয় ৪৪০ টাকা। হৃদয় নামে চালকের একজন সহকারী বলেন, ভোর থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত পরিশ্রম করে একজন চালক পান ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সহকারী পান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। লেগুনার মলিককে দিতে হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। আর শ্যামলী, শিয়া মসজিদ ও ঢাকা উদ্যান পয়েন্টে দৈনিক চাঁদা দিতেই আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যায়।
ঢাকা উদ্যানের লেগুনাস্ট্যান্ড ঘুরে হৃদয়ের কথার সত্যতা মেলে। আলমগীর নামের একজন লেগুনামালিক প্রতিটি লেগুনা থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা তুলছিলেন। চাঁদা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা মালিক সমিতির চাঁদা। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি, তাই চাঁদা ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য শ্যামলী থেকে ঢাকা উদ্যানে চলাচলকারী লেগুনা মালিক সমিতির সভাপতি মনির হোসেনের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
শ্যামলী মোড়ে লেগুনা থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায় লাবলু নামের একজনকে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বলেন, চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। আর এর কারণে বাড়তি খরচের বোঝা চাপে যাত্রীদের ওপর।