বগুড়ায় বিবাহ সনদের জন্য ইচ্ছেমতো টাকা আদায় কাজিদের
বগুড়ার কলোনি এলাকার বাসিন্দা আসাফ-উদ-দৌলা তিন বছর আগে বিয়ে করেছেন। তিনি বগুড়া শহরের একজন বিবাহ নিবন্ধনকারীর (কাজি) কাছে বিয়ে নিবন্ধন করেন। ওই সময় নিকাহনামা (বিয়ের সনদ) নেননি। কিন্তু গত সপ্তাহে সনদ আনতে যান। তাঁর কাছ সনদের জন্য তিন হাজার টাকা দাবি করেন কাজি।
জানতে চাইলে আসাফ-উদ-দৌলা বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বিয়ের সনদের জন্য ৫০ টাকা করে নেওয়ার কথা। কিন্তু কাজি ইচ্ছেমতো টাকা চাচ্ছেন।’
মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন বিধিমালা-২০০৯–এর সংশোধনী গেজেটের বিধিমালা ২১–এর ‘খ’ উপবিধির ৩ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার নকলপ্রাপ্তি ফি ৫০ টাকা, যাতায়াত বাবদ প্রতি কিলোমিটার ১০ টাকা ও তল্লাশি ফি ১০ টাকা গ্রহণ করতে পারবেন। আইনটি প্রজ্ঞাপন আকারে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল প্রকাশিত হয়।
জেলায় বিবাহ ও তালাক নিবন্ধনকারী (কাজি) আছেন ১১৫ জন।
সারিয়াকান্দির বাসিন্দা আবদুল সামাদ (ছদ্মনাম) বগুড়ার চেলোপাড়ার কাজি মো. মাহমুদুর রহমানের কাছে গিয়েছিলেন তাঁর বোনের বিবাহ সনদ তোলার জন্য। তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি বিদেশ যাবেন। এ কারণে তাঁদের বিবাহ সদন দরকার। কাজির কাছে সনদ চাইলে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু তিনি এত টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এই নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করেন।
কাজি মাহমুদুরের সহকারী মো. বেলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ইংরেজি নিকাহনামা দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়ার কোনো নির্ধারিত বিধি নেই। ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে ইংরেজি সনদ দেওয়া হয়। তবে বাংলা সনদের মূল্য নেওয়া হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। বগুড়ার সব কাজি ইংরেজি সনদের জন্য ২ হাজার টাকার বেশি নেন।
শহরের চেলোপাড়ার কাজি মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলায় সনদ দেওয়া হলে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু ইংরেজি সনদের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে ঝামেলাও হয়। সম্প্রতি শহরের কানচগাড়ি এলাকায় এক বাসিন্দার কাছ থেকে সনদের জন্য টাকা চাওয়ায় তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
বগুড়ার জলেশ্বরীতলা কালীবাড়ি এলাকায় কাজি মুহ. মুনজুরুল হকের সহকারী আবদুল মতিন বলেন, ইংরেজি সনদ নেওয়ার জন্য বেশি লোকজন আসেন না। মাসে দু–চারজন আসেন। তাঁদের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বিদেশে যাওয়ার জন্যই সাধারণত মানুষজন এ ধরনের সনদের জন্য আবেদন করেন। বাংলায় সনদে আলাদা টাকার কথা বলতে হয় না। অনেকে ইচ্ছে করেই ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে যান।
ইংরেজি সনদে প্রায় একই পরিমাণ টাকা নেওয়ার কথা বলছেন পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি আবদুল ওয়াদুদের সহকারী বনি আমীন। তিনি বলেন, অনেক সময় এ নিকাহনামা খুব জরুরি হয়ে পড়ে অনেকের কাছে। তখন কেউ কেউ ১০ হাজার টাকাও নেন। তবে সাধারণত ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়া হয় না। কারণ ইংরেজিতে সনদ দেওয়ার জন্য বাইরের কম্পিউটারের দোকান থেকে টাইপ করে আনতে হয়।
১৩ জানুয়ারি শহরের ফুলবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আহম্মদ সউদ উল ইসলাম এই কাজির কাছ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিয়ের ইংরেজি সনদ নিয়েছেন বলে জানান কাজির সহকারী বনি আমীন।
সনদ দেওয়ার জন্য এই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, বিবাহ সনদের ইংরেজি অনুলিপির জন্য আলোচনার মাধ্যমে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা নেওয়া হয়। সরকারি নির্ধারিত কোনো ফি নেই।
তবে জেলা রেজিস্ট্রার দপ্তর বলছে, বিয়ের দিনই বিনা টাকায় এই নিকাহনামা বা বিয়ের সনদ দুই পক্ষকে দেওয়ার কথা। পরবর্তী সময়েও সবার জন্য উন্মুক্ত। এই সনদের জন্য নির্ধারিত মূল্য রয়েছে। এটা গেজেটে উল্লেখ রয়েছে। এর বেশি টাকা নিলে তা অন্যায়।
জেলা রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম প্রামাণিক বলেন, বিবাহ সনদ নেওয়ার জন্য ৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ রয়েছে। কারও কাছ থেকে বেশি টাকা আদায়ের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।