পাহাড়ে রক্ত ঝরছেই

হেলিকপ্টার থেকে নামানো হচ্ছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত কর্মকর্তাদের। গতকাল রাত পৌনে ১১টায় চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।  ছবি: সৌরভ দাশ
হেলিকপ্টার থেকে নামানো হচ্ছে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত কর্মকর্তাদের। গতকাল রাত পৌনে ১১টায় চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। ছবি: সৌরভ দাশ
>

• ঘটনাগুলো তিনটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ
• কোনো পক্ষই হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করে না
• পাল্টাপাল্টি হামলায় হতাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষও
• সোমবার বাঘাইছড়িতে হামলায় ছয়জন নিহত হন

পাহাড়ে সংঘাতে গত ১৫ মাসে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে পাহাড়ের দুই জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে আঞ্চলিক দলগুলো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাঙামাটির বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষে গাড়িতে করে ফেরার সময় নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন।

পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসব হামলার ঘটনা মূলত তিনটি আঞ্চলিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এগুলো হচ্ছে ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এবং জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। এই তিনটি দলের মধ্যে এক পক্ষে ইউপিডিএফ এবং আরেক পক্ষে রয়েছে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক ও জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। একবার এক বা দুই দলের কেউ আক্রান্ত হলে পরেরবার তাদের প্রতিপক্ষের কেউ হামলার শিকার হচ্ছে। তবে কোনো পক্ষই ঘটনার দায় স্বীকার করে না। পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় হতাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষও। তবে এবার আঞ্চলিক দলগুলোর বাইরে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ।

একের পর এক খুনের ঘটনায় পাহাড়ে এখন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

খুনের ঘটনার শুরু
১৯৭২ সালে পাহাড়ের মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য জেএসএস গঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি হওয়ার পর জেএসএসের বাইরে ইউপিডিএফ নামে নতুন দল গঠিত হয়। পরে ২০১০ সালে মূল জেএসএস ভেঙে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। ২০১৫ সালে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে খুনোখুনি প্রায় বন্ধ ছিল।

তবে ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ ভেঙে আরও একটি নতুন দল গঠিত হয়। ইউপিডিএফের সাবেক নেতা
তপন জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে নতুন সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। নতুন এ সংগঠন আত্মপ্রকাশের পরই অশান্ত হয়ে ওঠে পাহাড়। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশের ২০ দিনের মাথায় ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচরে সাবেক ইউপি সদস্য ও ইউপিডিএফ নেতা অনাদি রঞ্জন চাকমাকে ব্রাশফায়ারে খুন করে সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে শুরু হয় খুনোখুনি।

এর মধ্যে তিনটি বড় ঘটনা ঘটেছে গত ১০ মাসে। গত ৪ মে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের আহ্বায়ক তপনজ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজন খুন হন। আগের দিন খুন হয়েছিলেন রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পথে গুলিতে এই পাঁচজন খুন হন। গত ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে গুলিতে ছয়জন নিহত হন। গতকাল খুন হলেন ছয়জন। এর মধ্যে একজন পোলিং কর্মকর্তা, চারজন আনসার সদস্য, একজন গাড়িচালকের সহকারী।

খুনের ঘটনার শেষ কবে
সাড়ে ১৫ মাস ধরে খুনোখুনির ঘটনা ঘটতে থাকলেও তা বন্ধে দলগুলোর মধ্যে বা প্রশাসনের মধ্যে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ইউপিডিএফ মনে করে, সংঘাত বন্ধের চাবি সরকারের হাতে। তবে প্রশাসন মনে করে, দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব বসলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।