পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধ আশ্রাব আলীর বাড়ির সঙ্গে মসজিদ। পাশেই একটি কারখানার জেনারেটরের বিকট শব্দে মসজিদে নামাজ পড়তে কষ্ট হয়। মাগরিব ও এশার নামাজের সময় বেশি শব্দ কানে বাজে। শব্দের মাত্রা বেড়ে গেলে রাতে ঘুমাতে পারেন না। বাসায় বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারে না। জেনারেটরের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে বাসার ভাড়াটেরা চলে গেছেন। নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আশ্রাব আলী বলেন, ‘বাপ-দাদার ভিটে ছেড়ে দিয়ে কোথায় যাব?’
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় একটি কারখানায় গ্যাসে চালিত জেনারেটরের বিকট শব্দের কারণে চরম দুর্ভোগের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ ও ভালুকা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত শব্দ সহ্য করতে না পেরে কারখানার আশপাশের ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে কারখানা ও আশপাশের এলাকা ঘুরে অন্তত ২৫ থেকে ২৬ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার জামিরদিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে আবাসিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে এসকিউ গ্রুপের কালার ফ্যাশন নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। মহাসড়ক থেকে পূর্ব দিকে কয়েক শ গজ এগোতেই দেখা যায় একটি আবাসিক এলাকা। সেখানেই ফার্নিচারসহ বিভিন্ন ধরনের ২০-২৫টি দোকান দিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। পাশেই রয়েছে একটি বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা। এসবের পাশেই কালার ফ্যাশনে বিকট শব্দে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে গ্যাসে চালিত তিনটি জেনারেটর। একটির ক্ষমতা ৯০০ কিলোওয়াট আর দুটির ক্ষমতা ৭৫০ কিলোওয়াট করে। গত প্রায় চার বছর আগে স্থাপন করা হয় এসব জেনারেটর।
স্থানীয় বাসিন্দা সামিউল হক, আলাল উদ্দিন, আবদুল হেকিম, আবদুল মতিন, আবদুল হাই, আবদুল হক, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মতিন ও আবদুল হামিদ জানান, চার বছর ধরে তাঁরা কারখানার জেনারেটরের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ। দোকানদার আবু রায়হান জানান, পণ্য বেচাকেনার সময় ক্রেতাদের একাধিকবার জিজ্ঞেস করতে হয়। কারখানার জেনারেটরের বিকট শব্দে অনেক কথাই শোনা যায় না।
আবুল মনসুর নামের এক ভাড়াটে জানান, চলতি মাসেই তিন হাজার টাকায় একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলেন। কারখানার শব্দের কারণে বাসা ছাড়ার কথা মালিককে জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী শুক্রবার বাসা খালি করে দেবেন।
হেলাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি জানান, কারখানার ২ নম্বর গেট এলাকার আশপাশে প্রায় চার শতাধিক পরিবারের কয়েক হাজার লোক বসবাস করে। কারখানার বিকট শব্দে দুর্ভোগের মধ্যে তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে আলাউদ্দিন ফকির ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সামিউল হক নামের আরেকজন বাদী হয়ে কারখানার প্রশাসন ম্যানেজার রিয়াজ, স্টেশন ম্যানেজার ফরিদ আহম্মেদ, প্রশাসন কর্মকর্তা কালামকে বিবাদী করে ভালুকা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। শব্দদূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
কারখানাটির প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, কারখানার ভেতরের শব্দ যাতে বাইরে না যায়, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন জেনারেটরে ১২০-১৩০ ডেসিবল শব্দ উৎপন্ন হয়। সেটাকে কমিয়ে ৭৫-৮০ ডেসিবল করার কাজ চলছে। কারখানার ম্যানেজার ফরিদ আহমেদ শব্দদূষণের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছ থেকে ১৫ দিনের সময় নেওয়া হয়েছে। আশা করছি এর আগেই কাজ শেষ করতে পারব।’
ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শব্দদূষণ না কমানো হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।