সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি (জাপা) বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে ও এর বাইরে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে সংসদীয় রীতিনীতি মেনে জনস্বার্থে গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। জাপা কখনো জাতি বা দেশের জন্য হঠকারী বা অনভিপ্রেত হয় এমন কোনো কিছুই করবে না বা তাতে সমর্থন দেবে না।
আজ সোমবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর ভাঙনকবলিত কর্ণপুর মৌজার চওড়াটারী গ্রাম পরিদর্শন শেষে নদীপাড়-সংলগ্ন সামছুল হকের বাড়ির উঠানে সমাবেশে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সাংসদ জি এম কাদের বলেন, ‘সাধারণত বিরোধী রাজনৈতিক দল বলতে আমরা যে ধরনের চিত্র, পরিবেশ ও পরিস্থিতি মানসপটে দেখতে পাই, জাপা তার অনুসরণ করবে না। তবে জনস্বার্থে প্রয়োজন হলেই জাপা যেকোনো দাবি উত্থাপন, সমর্থন বা বিরোধিতা করতে বা দাবি আদায়ে জাতীয় সংসদে বা এর বাইরে আলাপ আলোচনা, তর্ক বা বিতর্ক করতে পিছপা হবে না। আমাদের যতটুকু শক্তি বা সামর্থ্য অথবা সক্ষমতা রয়েছে, তার সর্বোচ্চ ইতিবাচক ব্যবহার করে দেশ ও জাতি গঠনে জাপা কাজ করতে বদ্ধপরিকর থাকবে। জাপা কখনো জাতি বা দেশের জন্য হঠকারী বা অনভিপ্রেত হয়, এমন কোনো কিছুই করবে না বা তা সমর্থন করবে না।’
জি এম কাদের আরও বলেন, মোগলহাটের চওড়াটারী গ্রামসহ আশপাশের অন্যান্য গ্রাম ও মহল্লায় ধরলা নদীর চলমান ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ধরলা নদীর ডান তীরে প্রতিরক্ষামূলক বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, এই জন্য এখন জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত চওড়াটারী গ্রামের ধরলার ডান তীরে প্রথমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পদক্ষেপ নেওয়া ও পরে স্থায়ী সমাধান হিসেবে এলাকাটিতে সিসি ব্লক দিয়ে যাতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
সাংবাদিকসহ এলাকাবাসীর দাবি ও প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া মোগলহাট চেকপোস্টটি যাতে আবার পাসপোর্টধারী বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষের বৈধভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একজন সাংসদ হিসেবে যতটুকু ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে, সেটা তিনি রাখবেন। তিনি বলেন, ‘মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর স্থাপনের সরকারি যে ঘোষণা রয়েছে সেটি বাস্তবায়নে এর আগের সরকারের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে বাংলাদেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতসহ অন্যদের সঙ্গে পত্র যোগাযোগ করেছিলাম। পরের সরকারের সময় পাঁচ বছর আমি সাংসদ ছিলাম না। আবার লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সাংসদ হয়েছি। আবার মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর স্থাপনে ভূমিকা রাখব।’ তিনি বলেন, ‘যত দূর জেনেছি লালমনিরহাটের মতো ভারতের কোচবিহারেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে জনদাবি হিসেবে এসেছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন লাগবে। বিষয়টি উভয় দেশে প্রক্রিয়াধীন, বাস্তবায়নে সময় লাগবে।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভারতের লোকসভায় কোচবিহারের একজন বিধায়ক সম্প্রতি ১৯৪৭-পূর্ব সময়ের মতো কোচবিহার-দিনহাটা-গিতালদহ হয়ে লালমনিরহাটের মোগলহাট-লালমনিরহাট-তিস্তা-কাউনিয়া হয়ে রেলপথে সরাসরি পার্বতীপুর হয়ে কলকাতা যাওয়ার দাবি ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। লালমনিরহাটের ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে বন্ধ হওয়া মোগলহাট রেলস্টেশনটি পুনরায় সংস্কার করে চালুর দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে মোগলহাট রেলস্টেশন চালু ও মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণার বাস্তবায়নের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে।