ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বরিশালের লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়িটি সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বাড়িটির অধিকাংশ স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে মূল ভবন এবং কয়েকটি মন্দির জরাজীর্ণ অবস্থায় টিকে আছে। আর জমি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি জমিদারের এক উত্তরাধিকারী বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি দেন। তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে বাড়িকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সফিউর রহমানকে চিঠি লেখেন অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালতের সলিসিটার এবং লাকুটিয়া জমিদারের আইনি উত্তরাধিকারী পঙ্কজ রায়ের মেয়ে আলপনা রায়। চিঠিতে তিনি জমিদারবাড়িটির বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এটিকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সুরক্ষার দাবি জানান। আলপনা রায়ের চিঠি পাওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে বাড়িটির বর্তমান অবস্থা এবং সার্বিক বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য বরিশাল জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আলপনা রায় তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেন, লাকুটিয়া জমিদারবাড়ির ভবনগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সম্প্রতি তাঁরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছেন, জমিদারবাড়ির মূল ভবনটি ভেঙে ফেলা হতে পারে। বিষয়টি জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বরিশাল জাদুঘর সূত্র জানায়, সম্প্রতি জাদুঘরের কর্মকর্তারা জমিদারবাড়িটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা একটি প্রতিবেদন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বাড়িটির মূল দোতলা ভবনটি টিকে আছে। এ ছাড়া পাঁচটি মন্দির, তিনটি বড় এবং একটি ছোট পুকুর রয়েছে।
লোহার দরজা পেরিয়ে জমিদারবাড়ির মূল প্রবেশপথের বাঁ পাশে শানবাঁধানো পুকুর। বাড়িটি এখন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে আছে। বাঁ পাশে বিএডিসির ট্রাক্টর রাখার ঘর আর ডান পাশে তাঁদের গোডাউন আর অফিস কক্ষ। পেছনে আছে পাকা উঠান। সেখানে, বীজ শুকানো হয়। বাড়ির কাছেই আমবাগান। বাগানটি গড়ে উঠেছে বিশাল এক দিঘির পাড়ে। একে সবাই রানির দিঘি বলে। খোসালচন্দ্র রায় লিখিত বাকেরগঞ্জের ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রূপচন্দ্র রায় ছিলেন এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নাতি রাজচন্দ্র রায়ের সময়ে এই পরিবারের প্রতিপত্তি বাড়ে। ৪৯ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর তিনি মূল জমিদারবাড়িটি তৈরি করেছিলেন। রূপচন্দ্র রায় খুব প্রজাদরদি জমিদার ছিলেন। লাকুটিয়া থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক তাঁর আমলে তৈরি হয়েছিল। তাঁর দুই ছেলে রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহীন আলম বলেন, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণ করে সুরক্ষার উদ্যোগ নিলে ঐতিহাসিক এই বাড়ি বরিশাল বিভাগের একটি বড় নিদর্শন হবে।
বিএডিসির বরিশালের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক শেখ ইকবাল আহমেদ বলেন, বিএডিসি কয়েক বছর ধরে বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য এই এলাকা ব্যবহার করে আসছে। এই বাড়ি একটি বড় ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। কিন্তু তাঁদের বরাদ্দ না থাকায় দালান ও মন্দির সংরক্ষণের কাজ করতে পারেননি। এই বাড়ি সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হলে তাঁরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন।