পেরেকমুক্ত হলো গাছগুলো
একেকটি গাছে ঠুকে দেওয়া হয়েছিল ১০০ থেকে ১৫০টি পেরেক। এতে গাছগুলোতে নির্যাস বেরিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কালচে দাগের। এই কষ্ট ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫৬টি পামগাছের। গাছগুলোর সেই কষ্ট অবশেষে দূর হয়েছে। ‘১ / ২৪ সামাজিক আন্দোলন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা সব গাছ থেকেই পেরেক তুলে নিয়েছেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মুখ থেকে ডেন্টাল ইউনিটের মুখ পর্যন্ত এই গাছগুলোর অবস্থান। গাছের গায়ে যাতে কেউ পোস্টার-ব্যানার সাঁটাতে না পারে, সে জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই গাছগুলোতে পেরেক ঠুকিয়েছিল। এ নিয়ে ‘গাছগুলো যেন কাঁদছে’ শিরোনামে গত ৭ জানুয়ারি প্রথম আলোতে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে গাছগুলো থেকে পেরেক তোলার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নীরব থাকলেও সংগঠনটি এগিয়ে আসে।
‘২৪ ঘণ্টায় একটি ভালো কাজ, গড়তে পারে সুন্দর সমাজ’ স্লোগানে কাজ করে ১ / ২৪ সামাজিক আন্দোলন। এ সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন। সংগঠনের ১৪০ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন।
৫ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের উপপরিচালক আকতারুল ইসলামের কাছ থেকে পেরেক তোলার বিষয়ে অনুমতি নেয় সংগঠনটি। অনুমতি মেলার পর ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা প্রাথমিকভাবে ২টি শাবল নিয়ে ৬টি গাছের পেরেক তোলেন। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁরা ১০টি গাছের পেরেক তোলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় তাঁরা বাকি ৪০টি গাছের পেরেক তুলে ফেলেন।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিনসহ ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ১৮টি শাবল নিয়ে গাছ থেকে পেরেক তোলার কাজ করছিলেন। কেউ মই দিয়ে গাছের ওপরের দিকের পেরেকগুলো তুলছিলেন। কেউবা নিচের অংশের পেরেক তুলছিলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ওই এলাকা দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীরাও।
গাছ থেকে পেরেক তুলে নেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন, সদস্য হোসাইন আল মামুন, রুমানা রিফাত, মো. রমজান আলী, সাগর চৌধুরী, আল মামুন ও রুবেল দাশ। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আলো প্রতিবেদনটি না করলে তাঁরা বিষয়টি জানতেন না। এই প্রতিবেদনটি তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, গাছে পেরেক ঠোকার বিষয়টি জেনে তাঁদের খুব খারাপ লাগে। তাই তাঁরা পেরেকগুলো তুলে নেওয়ার বিষয়ে এগিয়ে আসেন। অনভিজ্ঞতার কারণে কাজটি কষ্টসাধ্য হলেও সবাই পেরেক তোলার বিষয়টি উপভোগ করেছেন।
সংগঠনটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সংগঠনটি গাছ থেকে পেরেক তোলার বিষয়ে অনুমতি চাইলে তিনি দ্রুতই তাদের অনুমতি দিয়ে দেন।