দুদকের অভিযানে সিবিএ নেতার দখল থেকে সরকারি পাজেরো গাড়ি উদ্ধার
ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২৮২৭ নম্বরের পাজেরো গাড়িটি ব্যবহারের এখতিয়ার যুগ্ম সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের। অথচ ১০ বছর ধরে এটি ব্যবহার করছিলেন তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী। সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ, চালকের বেতনসহ সব খরচ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানই। এক বছর আগে অবসরে যাওয়ার পরও গাড়িটি ছিল তাঁর দখলে। আজ সোমবার অভিযান চালিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অবসরপ্রাপ্ত স্টেনো টাইপিস্ট আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি পিডিবির সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সাধারণ সম্পাদক।
এই গাড়ি সার্বক্ষণিকভাবে আলাউদ্দিন মিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করত। গাড়ি ব্যবহারের এখতিয়ার না থাকলেও সিবিএ নেতা হওয়ার ‘দাপটে’ তিনি গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বলে পিডিবির কর্মচারীরা জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, গাড়ির জন্য প্রতিদিন ১৫ লিটার ডিজেল পেয়েছেন প্রতিষ্ঠান থেকে। এ হিসাবে ১০ বছরে তিনি ৩৫ লাখ টাকার জ্বালানি ব্যবহার করেছেন। এই সময়ে চালককে বেতন বাবদ পিডিবিকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা। রক্ষণাবেক্ষণসহ সব মিলিয়ে আলাউদ্দিন মিয়া অবৈধভাবে গাড়ির জন্য সরকারের ব্যয় করেছেন কোটি টাকারও বেশি।
আজ দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করে দুদকের এনফোর্সমেন্ট দল। সহকারী পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান শেষে দুপুরে দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান এনফোর্সমেন্ট অভিযানের সমন্বয়ক ও দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ওই গাড়ি উদ্ধার করা হয়। গাড়ি উদ্ধারের সময় এর চালক ছাড়া কেউ ছিলেন না। চালকের বক্তব্য রেকর্ড করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দুদক মহাপরিচালক জানান, আলাউদ্দিন মিয়া ২০১৭ সালের আগস্টে অবসরে যান। তিনি তখন পিডিবির নকশা ও পরিদর্শন পরিদপ্তরের স্টেনো টাইপিস্ট পদে ছিলেন। গত আগস্টে তাঁর অবসর–উত্তর ছুটির (পিআরএল) সময়সীমাও শেষ হয়েছে। তারপরও তিনি অবৈধভাবে গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন। গাড়িটি পিডিবির নামে বরাদ্দ থাকলেও ওই কর্মচারী কোনোভাবেই ব্যবহার করতে পারেন না।
জানা গেছে, আলাউদ্দিন মিয়া গাড়িটি ব্যবহার করলেও গাড়ির লগবইয়ে সই করতেন সিবিএর দপ্তর সম্পাদক নুরে আলম ফেরদৌস। আইনত যিনি গাড়ি ব্যবহার করেন, তাঁকেই লগবইয়ে সই করতে হয়।
এই ঘটনাকে একটি ‘বড় অপরাধ’ হিসেবে মন্তব্য করে দুদক মহাপরিচালক বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারীর নামে গাড়িটি কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হলো, এর সঙ্গে পিডিবি বা অন্য কোনো অফিসের কারা জড়িত, তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। তখন সেই অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এখানে পিডিবির কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে, অনুশাসনে ব্যর্থতা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ঘটনায় মামলা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অনুসন্ধান করব, ওই কর্মচারীর সম্পদও খতিয়ে দেখা হবে। অনুসন্ধানের জন্য গাড়িটি দুদকে আনা হয়েছে। পরে পিডিবির কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। তবে অনুসন্ধান চলাকালীন কেউ গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে সরকারে পরিবহন পুল কিংবা অন্য দপ্তরে এ ধরনের অপব্যবহার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে জানতে সিবিএ নেতা আলাউদ্দিন মিয়ার ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।