ট্রাফিক শৃঙ্খলার পক্ষে কী পেলাম?
>* রাজপথে নৈরাজ্য চলছেই
* চলমান ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের মেয়াদ দুদিন বাড়ল
* দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধান চান বিশেষজ্ঞরা
রাজধানী ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ছয় মাসের মধ্যে দুই মাসেই বিশেষ কার্যক্রম চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সর্বশেষ ১৭ দিন ধরে চলছে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ। তারপরও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দেওয়া স্বল্পমেয়াদি নির্দেশনাগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী সমাধান ছাড়া শুধু সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করা যাবে না।
গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। সেদিন থেকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৫ থেকে ১৪ আগস্ট বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ, ৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ট্রাফিক সচেতনতা মাস, ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শুরু করে ডিএমপি। এবারের শৃঙ্খলা পক্ষে ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান, গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পদচারী-সেতু ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ, স্টপেজ ছাড়া অন্য সময় চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ রাখা, স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামলে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১৩ ধরনের কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি গত বছরের ৩০ আগস্ট ৩০টি নির্দেশনা জারি করে। এর মধ্যে সাতটি নির্দেশনা ছিল দ্রুত কার্যকর করার মতো। পুলিশের ঘোষিত শৃঙ্খলা পক্ষের কার্যক্রমের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি নির্দেশনাগুলোর মিল রয়েছে। চলমান শৃঙ্খলা পক্ষেও নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
সড়কের নৈরাজ্য বন্ধে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে মনে করেন বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধান ছাড়া সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ হবে না। ফুটপাত দখলমুক্ত করা, চালকদের প্রশিক্ষণ, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা কমাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। শুধু সচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।
গতকাল মিরপুর ১০ নম্বর, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাস থেকে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধ হয়নি। ডিএমপির চিহ্নিত করে দেওয়া বাস থামার জায়গাতে বাস থামছে না। চলাচলের সময় অধিকাংশ বাসের দরজা বন্ধও রাখা হচ্ছে না।
আগারগাঁও এলাকায় কর্তব্যরত ট্রাফিক সদস্য কামরুজ্জামান বলেন, লোকজন বাসে ওঠার জন্য মোড়ে এসে দাঁড়ায়। বলে বলে মোড় থেকে সরিয়ে দিতে হয়। কেউ হাত দেখালেই চালকেরা বাস থামিয়ে দেন।
শৃঙ্খলা পক্ষ উদ্বোধনের দিন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত আধুনিক করিডর চালু করা হবে। বলা হয়েছিল, এ পথে দূর–নিয়ন্ত্রিত ও স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতি কার্যকর করা হবে। গতকাল দেখা যায়, এই পথের কয়েকটি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় সংকেত বাতি জ্বললেও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা হাতের ইশারাতেই যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন।
বিকেল চারটার দিকে কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়ে দেখা যায়, পথচারীরা চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে হাত উঁচিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। মোড়ের চারদিকেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য থাকলেও কেউ পথচারীদের বাধা দিচ্ছেন না। তবে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী দুজনই হেলমেট ব্যবহারের নির্দেশনা অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজধানীর সড়কে শতভাগ শৃঙ্খলা ফিরেছে, এটি দাবি করব না। তবে আগের তুলনায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। পুলিশের ধারাবাহিক কার্যক্রমের ফলে জনগণের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর বাস্তবায়ন চলমান প্রক্রিয়া। নির্দেশনা বাস্তবায়নে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।’
মামলা ও জরিমানা
ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের ১৬ দিনে (গত বুধবার পর্যন্ত) ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ৯৫ হাজার ৮৩৫টি মামলা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ৪০ হাজার ৭৫৩টি মামলা হয়েছে মোটরসাইকেলচালকদের বিরুদ্ধে।
মেয়াদ বাড়ল শৃঙ্খলা পক্ষের
আগের ঘোষণা অনুযায়ী এবারের ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ার কথা। পুলিশ সেবা সপ্তাহের কারণে শৃঙ্খলা পক্ষের মেয়াদ আরও দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। গত ২৭ জানুয়ারি শুরু হওয়া পুলিশ সেবা সপ্তাহ চলবে কাল ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।