টিআইএর প্রতিবেদনকে 'ত্রুটিপূর্ণ ও মনগড়া' বললেন তথ্যমন্ত্রী
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের দুর্নীতি বেড়েছে বলে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে সেটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ত্রুটিপূর্ণ ও মনগড়া’ বলে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
জার্মানির বার্লিনভিত্তিক টিআই গতকাল মঙ্গলবার এই সূচক প্রকাশ করেছে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের ২০১৮ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয় দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে অবনতি হয়েছে ছয় ধাপ।
টিআইএর প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি কিছু অভিযোগ উপস্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে যখন নতুন সরকার গঠিত হলো তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন নাকি প্রকাশ করেছিল, তাদের বক্তব্যে এটি নাকি গবেষণা প্রতিবেদন। অথচ নির্বাচনে টিআইবির পর্যবেক্ষকই ছিল না। তাদের বক্তব্য ও বিএনপির বক্তব্যে ৮০ শতাংশ মিল ছিল। মনে হয়েছিল বিএনপির হয়েই তারা যেন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেটি যখন হালে পানি পায়নি, এরপর তারা গতকাল দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে। এটি করে তারা আন্তর্জাতিকভাবে দেশ, দেশের জনগণ ও সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী মনে করেন দেশকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যেটা সমীচীন নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি মনগড়া প্রতিবেদন।
এ পর্যায়ে সাংবাদিকেরা জানতে চান তাহলে কি এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘ডেফিনেটলি( অবশ্যই), আমরা মনে এ প্রতিবেদন একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন।’
টিআই- এর সূচক অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ গতবার পেয়েছিল ২৮। এক বছরের ব্যবধানে এবার দুই পয়েন্ট কমে স্কোর হয়েছে ২৬। সূচকের স্কেলে শূন্য স্কোর সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বাধিক সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এবার স্কোর অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো থেকে খারাপের দিকে ১৪৯তম। গতবার ছিল ১৪৩তম। ফলে বাংলাদেশ ছয় ধাপ পিছিয়েছে। আবার নিচ থেকে ওপরের দিকে অবস্থান ১৩তম। বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে আছে আফ্রিকার দেশ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ও উগান্ডা। গত বছর বাংলাদেশ ছিল ১৭তম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চার ধাপ পিছিয়েছে।
বাংলাদেশ এবার এশিয়ায় চতুর্থ সর্বনিম্ন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে দুর্নীতি বেশি তিনটি দেশে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতিতে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থা একটি দেশে, আফগানিস্তানে।
এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দুর্নীতিতে শীর্ষে। এর মধ্যে ২০০১ সালের ২৬ জুন টিআই যখন এই সূচক প্রকাশ করে, তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে পরপর চারবার দুর্নীতিতে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
এবারের সূচকে সবচেয়ে কম, ১০ নম্বর পেয়ে তালিকায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া। ১২ বছর ধরে দেশটি একই অবস্থানে রয়েছে। সোমালিয়ার চেয়ে কম দুর্নীতি হয় যথাক্রমে সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়ায়।
সূচকে ৮৮ নম্বর পেয়ে তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। অর্থাৎ পৃথিবীতে সবচেয়ে কম দুর্নীতি ডেনমার্কে। এর পর দুর্নীতি কম হওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান (২৫তম)। এরপর ভারত ৭৮তম, শ্রীলঙ্কা ৮৯তম, পাকিস্তান ১১৭তম, মালদ্বীপ ও নেপাল ১২৪তম, আফগানিস্তান ১৭২তম।
এবারের সূচকে ব্যবহৃত তথ্যের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে-ঘুষ আদান-প্রদান; স্বার্থের সংঘাত ও তহবিল অপসারণ; দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ ও অর্জনে বাধা প্রদান; ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক দলের স্বার্থে সরকারি পদমর্যাদার অপব্যবহার; প্রশাসন, কর আদায়, বিচার বিভাগসহ সরকারি কাজে বিধিবহির্ভূত অর্থ আদায়; অনিয়ম প্রতিরোধে ও দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে সরকারের সামর্থ্য, সাফল্য ও ব্যর্থতা।