এমফিল ও ৩০ বছর পর্যন্ত থাকছে ডাকসুর প্রার্থিতা, হলেই হচ্ছে ভোটকেন্দ্র
দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন। নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করার পর স্নাতকোত্তর বা এমফিলে অধ্যয়নরত আছেন কিন্তু তফসিল ঘোষণার দিন পর্যন্ত বয়স ৩০ অতিক্রম করবে না—এমন শিক্ষার্থীরা প্রার্থিতার সুযোগ পাচ্ছেন৷ যাঁরা একাধিক স্নাতকোত্তর করছেন, তাঁরাও সেই সুযোগ পাচ্ছেন৷ তবে পিএইচডি বা সন্ধ্যাকালীন কোনো কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী কোনোটিই হতে পারছেন না৷ আর বেশির ভাগ সংগঠনের দাবি সত্ত্বেও ভোটকেন্দ্রগুলো হচ্ছে আবাসিক হলেই৷
মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও নির্বাচনী আচরণবিধির বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়৷ সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই সভা চলে৷ সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান এসব সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান৷
মো. এনামউজ্জামান বলেন, ‘সন্ধ্যাকালীন কোর্স, প্রফেশনাল, এক্সিকিউটিভ, স্পেশাল মাস্টার্স, ডিপ্লোমা,এমএড, পিএইচডি, ডিবিএ, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স বা এ ধরনের অন্যান্য কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন—তাঁরা ভোটার বা প্রার্থী কোনোটিই হতে পারবেন না৷ ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের শিক্ষার্থীরা যে কোর্সেই অধ্যয়নরত থাকুক না কেন, তাঁরাও সেই সুযোগ পাবেন না৷ দেশে বা বিদেশে সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষার্থীরাও ভোটার বা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন না৷ অধিভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না৷’
পদাধিকার বলে সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক মো. এনামউজ্জামান বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলগুলোতেই হবে ভোটকেন্দ্র৷ ছাত্রসংগঠনগুলোর সুপারিশ ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে কয়েকটি সম্পাদক ও সদস্যপদ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ডাকসুর সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার বিষয়টি সিন্ডিকেট বিবেচনায় নিয়েছে৷ সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী অনুমোদিত হওয়ার পর বিষয়টি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানো যাবে৷’
নির্বাচন সামনে রেখে ২১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের বৈঠক হয়েছে৷ বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা অংশ নেন৷ সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবিদাওয়া, ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনী ও আচরণবিধি—সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট৷’
এর আগে ১০ জানুয়ারি ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনে গঠিত কমিটি ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়৷ সভার পর ১৪ জানুয়ারি কমিটির কাছে গঠনতন্ত্রের কোথায় তারা কী ধরনের পরিবর্তন চায়, তা লিখিতভাবে জমা দেয় সংগঠনগুলো৷ তবে গঠনতন্ত্রের মৌলিক কোনো বিষয়ে হাত না দিয়ে শুধু কয়েকটি নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব রেখেই গত ২০ জানুয়ারি উপাচার্যের কাছে সুপারিশ জমা দেন কমিটির সদস্যরা৷
এর মধ্যে গত ১৭ জানুয়ারি ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের অধ্যাপক এস এম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেন উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান৷ ওই দিন ১৫ সদস্যের একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়৷ নির্বাচন পরিচালনায় প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তার জন্য ৫ অধ্যাপককে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৯ জানুয়ারি৷ ওই দিন নির্বাচনের আচরণবিধি প্রণয়নে ৭ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয় ৷
পদ সৃষ্টি ও পদ পরিবর্তন
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি উপাচার্যসহ এর নির্বাহী কমিটি ২২ সদস্যবিশিষ্ট। এর মধ্যে তিনটি পদকে (কমন রুমবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান কমন রুমবিষয়ক সম্পাদক ও নারী কমন রুমবিষয়ক সম্পাদক) এক করে শুধু ‘কমন রুমবিষয়ক সম্পাদক’ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি নতুন সম্পাদক পদ (আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক) ও চারটি নতুন সদস্যপদ যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ডাকসুর নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২৪।
ভোটকেন্দ্র হলে রাখার সিদ্ধান্তে কয়েকটি সংগঠনের ক্ষোভ
ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়েছিল ছাত্রলীগ ছাড়া বেশির ভাগ সংগঠন৷ হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা৷ মুঠোফোন বন্ধ থাকায় ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি৷ এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রার্থিতার ব্যাপারে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তটি নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই৷ তবে হলের ভেতর ভোটকেন্দ্র করার যে সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নিয়েছে, তাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি৷ ছাত্রলীগকে সহযোগিতা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন৷’
তবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ৷ ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এখন তাঁদের একমাত্র দাবি দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা৷ ডাকসু নির্বাচনের বৃহত্তর স্বার্থে সব প্রগতিশীল সংগঠনকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বানও জানান সাদ্দাম৷