দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যারা সুস্থভাবে সমাজে ফিরতে চাইবে, তাদের সুযোগ করে দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ রোববার সকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের নিরাময়েরও উদ্যোগ নিতে বলেন।
টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। কারা মাদক দেশে নিয়ে আসছে, কারা ব্যবসা করছে এবং কারা সেবন করছে—এদের সবার বিরুদ্ধেই বহুমুখী ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘যারা মাদকটা সেবন করে, তাকেই নয়, যারা মাদকটা আনে, দেয় বা সাপ্লাই দেয়, তৈরি করে, তাদেরও ধরতে হবে। সেই সঙ্গে যারা সুস্থভাবে সমাজে ফিরতে চাইবে, তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন এবং মাদকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গিবাদ উচ্ছেদ করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজব্যবস্থায় দুর্নীতি একটি কালো ব্যাধির মতো ছেয়ে গেছে। কারণ, যে দেশে সামরিক সরকারেরা ক্ষমতায় আসে, তারা প্রথমে সমাজটাকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ, দুর্নীতিটাকেই তারা নীতি হিসেবে নেয় এবং দুর্নীতির সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ঋণখেলাপি থেকে দুর্নীতিবাজ যাদের আমরা দেখি, তাদের সৃষ্টি হয় ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কাছ থেকে।’ এসব কালো ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি এখন সময়ের প্রয়োজন এবং তার জন্য যা যা করণীয়, তাঁর সরকার করে যাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দেশকে যদি আমরা উন্নত করতে যাই, তাহলে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’ অতীতে দেশে জঙ্গিবাদ তথা বাংলা ভাই সৃষ্টিতে সে সময়কার সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) একটি প্রচ্ছন্ন মদদ ছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তারা (জঙ্গিরা) মিছিল করছে আর পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। এ রকম দুঃখজনক ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আর মাদক তো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।’
সমাজে অপরাধপ্রবণতার হার কমিয়ে আনার জন্য অপরাধ দমনের পাশাপাশি অপরাধ সংগঠনের কারণ খুঁজে বের করা এবং তাঁর প্রতিকারের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি দিলেই যে অপরাধ দমন হয়ে যাবে, তা নয়, বরং তাদের সমাজে সুস্থ জীবন দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
জলদস্যু ও বনদস্যুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করানোর পর তাঁদের সমাজে পুনর্বাসনের তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এদের পুনর্বাসন করা না গেলে তারা আবার ওই পথে ফিরে যেতে পারে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের প্রধানেরা উপস্থিত ছিলেন।