এবার ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার ১৪২৪’ পেয়েছেন তিন লেখক। বাংলাদেশের ভেতরে ১৪২৪ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত বই থেকে সৃজনশীল শাখায় যৌথভাবে মাসুদ খানের কাব্যগ্রন্থ প্রসন্ন দ্বীপদেশ ও সুমন রহমানের গল্পের বই নিরপরাধ ঘুম এবং মননশীল শাখায় শাওন আকন্দের গবেষণাগ্রন্থ বাংলাদেশের তাঁতশিল্প পুরস্কৃত হয়েছে। প্রথম আলোর উদ্যোগে ১৫ বছর ধরে পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে।
লোকসংস্কৃতিবিদ শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, ভীষ্মদেব চৌধুরী, শাহীন আখতার ও মোহাম্মদ আজমের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী সম্প্রতি পুরস্কারের জন্য বই তিনটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করেন। মননশীল ও সৃজনশীল—এই দুই শাখায় দুটি বইকে প্রতিবছর প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের জন্য নির্বাচিত করেন বিচারকেরা। তবে সৃজনশীল শাখায় এবার বিচারকমণ্ডলী পুরস্কারের জন্য দুটি বইকে যৌথভাবে নির্বাচন করেছেন।
পুরস্কার বিজয়ী এই তিন লেখকের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও অভিজ্ঞানপত্র দিয়ে প্রথম আলো আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত করবে। ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজয়ী লেখকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার। প্রকাশনা সংস্থা ‘পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স’ মাসুদ খানের বইটি প্রকাশ করেছে। সুমন রহমানের বইটি বেরিয়েছে ‘প্রথমা প্রকাশন’ থেকে। আর শাওন আকন্দের বইয়ের প্রকাশক ‘দেশাল’।
মাসুদ খানের জন্ম ২৯ মে ১৯৫৯, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলালে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন সিরাজগঞ্জের মেছরা উচ্চবিদ্যালয় ও সিরাজগঞ্জ কলেজে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। পরে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। পেশায় তিনি তড়িৎ ও ইলেকট্রন প্রকৌশলী। বর্তমানে কানাডার টরন্টোতে সেন্টেনিয়াল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। ছোট কাগজের মাধ্যমে লেখালেখির সূচনা। প্রথম কবিতার বই পাখি তীর্থ দিনে বেরিয়েছিল ১৯৯৩ সালে। অন্যান্য বই নদীকূলে করি বাস, সরাইখানা ও হারানো মানুষ, আঁধারতমা আলোকরূপে তোমায় আমি জানি, এই ধীর কমলাপ্রবণ সন্ধ্যায়, দেহ-অতিরিক্ত জ্বর, প্রজাপতি ও জংলি ফুলের উপাখ্যান এবং শ্রেষ্ঠ কবিতা।
মাসুদ খান ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার’, এ ছাড়া ১৯৯৩-এ বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার এবং ধানসিড়ির দেওয়া ‘জীবনানন্দ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন ২০১৬ সালে।
সুমন রহমানের জন্ম ৩০ মার্চ ১৯৭০, কিশোরগঞ্জের ভৈরবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন সরকারি কেবি উচ্চবিদ্যালয় ও হাজি আসমত কলেজে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড থেকে সংস্কৃতি অধ্যয়নে পিএইচডি করেছেন ২০১৩ সালে। কবিতার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু হলেও গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা নানা মাধ্যমে তিনি সক্রিয়। প্রথম কবিতার বই ঝিঁঝিট বেরিয়েছিল ১৯৯৪ সালে। তাঁর অন্যান্য বই গরিবি অমরতা, সিরামিকের নিজস্ব ঝগড়া ও কানার হাটবাজার। কমনওয়েলথ ছোটগল্প পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় বাংলা ভাষার প্রথম লেখক হিসেবে স্থান পেয়েছিল তাঁর গল্প ‘নিরপরাধ ঘুম’। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক।
শাওন আকন্দের জন্ম ১৫ অক্টোবর ১৯৭৫, কুষ্টিয়ায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন কুষ্টিয়া জেলা স্কুল ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক। প্রথম গবেষণাগ্রন্থ বাংলাদেশের আধুনিক চারুশিল্পের প্রবণতা বেরিয়েছিল ২০০৪ সালে। তাঁর অন্যান্য বই ধামরাই জনপদের কাঁসা-পিতল শিল্প, বাংলাদেশের লোকশিল্পের রূপরেখা, বাংলাদেশের সিনেমা-ব্যানার পেইন্টিং: বিলুপ্তপ্রায় শিল্পশৈলী। বেশ কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছেন তিনি। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন শিল্পকেন্দ্র ‘যথাশিল্প’-এর পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।