নালা নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই দখল
কুষ্টিয়া শহরের প্রধান সড়কসহ অলিগলির সড়কগুলোতে পানিনিষ্কাশনের বড় নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে প্রধান সড়কের নালাগুলো পানিনিষ্কাশনের পাশাপাশি পথচারীদের হাঁটার জন্যও ব্যবহার করা হবে। অথচ এসব নালা নির্মাণ হতে না হতেই সেগুলো ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাচ্ছে। ফলে পথচারীরা হাঁটতে না পেরে সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করছে।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবসায়ীরা সচেতন না হলে এগুলো দূর করা দুরূহ ব্যাপার। তারপরও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালানো হয়।
পৌরসভা সূত্র জানায়, তিন মাস আগে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রধান সড়ক এনএস রোডসহ শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে পানিনিষ্কাশনের জন্য নালা নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পৌরসভা ভবনের সামনে থেকে বড় বাজার রেলগেট পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় উভয় পাশে এবং মজমপুর এলাকা থেকে চৌড়হাস পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের ডান পাশে ৫ থেকে ৬ ফুট প্রশস্ত নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অলিগলিতে ৫ থেকে ৩ ফুট চওড়া নালা করা হচ্ছে। এনএস রোডের উভয় পাশে নির্মাণ করা নালার ওপরে টাইলস দিয়ে পথচারীদের জন্য হাঁটাচলার ফুটপাতের ব্যবস্থাও নকশাতে রয়েছে। সেভাবেই নালাগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
তবে সরেজমিনে দেখা যায়, নালা নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে দোকানমালিকেরা তাঁদের ব্যবসার জিনিসপত্র নালার ওপর রেখে ব্যবসা করছেন। এমনকি নালা নির্মাণের এক দিন পরেই তাঁরা দখল করে নিচ্ছেন। অনেকে নালাগুলোর ওপরে সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টারও করে নিয়েছেন।
সম্প্রতি এসএস রোডের থানা মোড় বক চত্বর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু দোকানি তাঁদের মালামাল নালার ওপর রেখে দিয়েছেন। কিছু বেকারির দোকানি নালাগুলোর ওপরে চুলা বসিয়ে জিলাপিসহ শিঙাড়া, পুরি ভাজছেন। পৌরবাজার, সিঙ্গার মোড় এলাকাতেও একই অবস্থা দেখা গেছে। এসব কারণে ফুটপাত ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাচ্ছে নাগরিকেরা।
>দখলের কারণে পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে না পেরে সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা করছে।
পৌরসভার নালা দখল করে ব্যবসা করার ব্যাপারে জানতে চাইলে দোকানিরা জানান, বছরের পর বছর ধরে এভাবেই তাঁরা ব্যবসা করছেন। এ জন্য নালা নতুনভাবে নির্মাণ হলেও তাঁরা সেখানেই কাজ করছেন। তাঁরা বলেন, দোকানের সামনে বাড়তি কোনো জায়গা না থাকায় তাঁরা নালার ওপর জিনিসপত্র রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সব কটি নালা নির্মাণ সম্পন্ন হলে তার ওপর টাইলস বসানো হবে, যাতে পথচারীরা সেটার ওপর দিয়ে হাঁটতে পারে। তবে পুরোনো নালা দখলে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযানের পরেই আবার সেটা দখল হয়ে যায়। বলতে গেলে সারা বছরই বিক্ষিপ্তভাবে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে চলে বেচাকেনা।
শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা রিপন হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে কিছু দূরেই স্কুল। সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে গেলে ফুটপাত বাদ দিয়ে সড়কের ওপর দিয়ে যেতে হয়। এতে প্রায়ই সমস্যা হয়।
এনএস রোডে নালা নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেশন ট্যাকের সুপারভাইজার সাঈদ মাহমুদ বলেন, নালা কাঁচা থাকতেই ভারী জিনিসপত্র দিয়ে দখল করে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু বলা যায় না। পৌরসভা দেখভাল না করলে পরবর্তী সময়ে নালায় সমস্যা হতে পারে।
জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সারা বছরই ফুটপাত দখলের চেষ্টা থাকে। সকালে অভিযান চালালে বিকেলে আবারও দোকানপাট বসে যায়। বড় পরিসরে নালা নির্মাণ হচ্ছে। এসব নালায় পথচারীদের হাঁটার জন্য ব্যবস্থাও থাকবে। টাইলস লাগানোর সময় বড় অভিযানের মাধ্যমে সব উচ্ছেদ করা হবে।