নির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত: জয়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, এবারের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার হার স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। গতকাল সোমবার রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেছেন।
সংসদ নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে জয় লিখেছেন, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেছে। ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে ২৬৭টি আসনে। জাতীয় পার্টি জিতেছে ২০টি আসনে, বিএনপি ৭টিতে ও অন্যান্যরা জিতেছে ৪টিতে। তিনটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে একটি আসনে। এই কেন্দ্রগুলোর ভোট বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করা হবে। সারা দেশে ১৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলোর মোট ভোটপ্রার্থীদের মধ্যে ব্যবধানের চেয়ে কম হওয়ায় আসনগুলোয় ফলাফল ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। একটি মাত্র আসনের নির্বাচন হয়নি, কারণ সেখানে বর্তমানে শুধু একজন প্রার্থী।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এই নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ভোট দেওয়ার হার ছিল ৭৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ আর ২০০৮ সালে সর্বোচ্চ ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। তাই বলা যায়, এবারের নির্বাচনের ভোট দেওয়ার হার স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার হাতে ভোট দেওয়ার সব পরিসংখ্যান নেই। আমাদের দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১০ কোটি ৪০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে এবার আনুমানিক পাঁচ কোটি ভোট পড়েছে, যা অনেক দেশের জনসংখ্যা থেকেও বেশি। যাঁরা বলছেন কারচুপি হয়েছে, ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে, তাঁরা কি বুঝতে পারছেন, এই নির্বাচন ফলাফল অন্য রকম হওয়ার জন্য বিরোধী দলগুলোর আড়াই কোটিরও বেশি ভোটারের সমর্থন প্রয়োজন ছিল? যা এক কথায় অবিশ্বাস্য।’
কারচুপির ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন ১১টি সংবাদের টেলিভিশন চ্যানেল আছে। প্রতিটি চ্যানেলই আমরা সারা দিন দেখছিলাম। কোনো চ্যানেলেই আমরা কারচুপির কোনো ঘটনা দেখিনি। প্রতিটি কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হচ্ছিল আর সব কেন্দ্রের সামনেই ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছিল। আমাদের দেশে বর্তমানে ১৩ কোটির মতো মোবাইল ফোন গ্রাহক আছে। বেশির ভাগ মোবাইলেই ক্যামেরা আছে। যেকোনো অসংগতি খুব সহজেই মানুষ রেকর্ড করতে পারেন। যেই কটি ঘটনা মানুষের চোখে পড়েছে, প্রতিটির ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেট পুনরায় চালু করার পরও তেমন অনিয়মের প্রমাণ কিন্তু আমরা দেখিনি।’
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে বলেন, ‘প্রায় সব বিদেশি পর্যবেক্ষকই বলেছে, আমাদের নির্বাচন ছিল গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ। সহিংসতায় প্রাণ হারান ১৭ জন, যার মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, একজন ছিলেন জাতীয় পার্টির আর একজন ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, যাঁকে বিএনপি-জামায়াত গুলি করে হত্যা করে কেন্দ্র দখলের সময়। ১৭ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন ছিলেন বিরোধী দলগুলোর সদস্য বা সমর্থক।’
জয় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এমন একটি সংগঠনকে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠাতে চায়, যেটার নেতৃত্বে আছেন বিএনপি আমলের একজন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এই আবদার ছিল আমাদের নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী। কারণ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হতে পারে না। এর জন্যই আনফ্রেল নামক সংগঠনটির কিছু সদস্য আসতে পারেননি বাংলাদেশে। বাকি সদস্যরা কিন্তু ঠিকই ভিসা পেয়েছিলেন এবং আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনকে পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানোর চেষ্টা আনফ্রেল ও এনডিআইয়ের পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ। নির্বাচনের আগেই বিবৃতি প্রকাশ করলেও নির্বাচনের পরে কিন্তু তাঁরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি, যদিও অন্যান্য পর্যবেক্ষকেরা ঠিকই দিয়েছেন।’
নবনির্বাচিত শেখ হাসিনাকে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানই আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম আমার মাকে ফোন করে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। আমার সহপাঠী ও ভুটানের রাজা, চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীও অভিনন্দন জানান।’
জয় অভিযোগ করেন, ‘সিএনএন, বিবিসি ও অন্যান্য পশ্চিমা গণমাধ্যম আমাদের দেশের সংবাদ, আমাদের দলের ও নির্বাচন কমিশনের সব বিবৃতি অগ্রাহ্য করেই তাদের মতো সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে আমাদের নির্বাচন নিয়ে। যে কয়েকটি অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর ব্যাপারে নির্বাচন ইতিমধ্যে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। শুধু সেগুলো আর বিরোধী দল, আনফ্রেল ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা নিউজ করে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক ও পক্ষপাতদুষ্ট।’