শ্রীপুর থেকে রাজাবাড়ি সড়ক হয়ে কাপাসিয়ায় প্রবেশের মুখেই চোখে পড়ে দড়িতে ঝোলানো সারি সারি ধানের শীষের পোস্টার। এরপর কাপাসিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, ছোট-বড় বাজারে চোখে পড়ে নৌকা, ধানের শীষ, কাস্তে, হাতপাখা, তারা, টেলিভিশন, গোলাপ ফুল প্রতীকের পোস্টার। পাশাপাশি ঝুলানো বিভিন্ন প্রতীকের এসব পোস্টার এ এলাকায় ভোটের মাঠের সম্প্রীতির পরিচয় দেয়।
কাপাসিয়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গাজীপুর-৪ সংসদীয় এলাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সাতটি দলের প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন এখানে। কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই। প্রার্থী ও স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা, হামলা ও প্রচারে বাধার ঘটনা ঘটলেও কাপাসিয়ায় তা নেই। গাজীপুরের অন্য চারটি আসনের সঙ্গেও তুলনা চলে না কাপাসিয়ার। সরকারি দলের সাংসদ ও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের এলাকা হিসেবে পরিচিত কাপাসিয়ায় গত দুইবারের সাংসদ তাঁর কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। নির্বাচন ঘিরে ছোট আকারের দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বড় সহিংসতা হয়নি এখানে। সব দলের প্রার্থীরা নিয়মিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তাঁরা। কয়েকটি এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারও চোখে পড়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এমনকি সাংসদের বাড়ি যাওয়ার পথে তাঁর এলাকা আমরাইদেও ধানের শীষের পোস্টার চোখে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিমিন হোসেন রিমি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাপাসিয়ায় ঢুকতে গিয়ে ধানের শীষের পোস্টার দেখে ভালোই লাগে। আমার পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া আছে, কেউ যেন কাউকে বাধা না দেয়, বিরক্ত না করে। সম্প্রীতি ছাড়া তো রাজনীতি চলতে পারে না।’
আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর ১৭ ডিসেম্বর প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জানাতে সরাসরি সিমিন হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রিয়াজুল হান্নান। সিমিন হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিপক্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে এমন যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিমিন হোসেন বলেন, এমন যোগাযোগই তো স্বাভাবিক, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন হওয়া উচিত। বিষয়টি গুরুত্বসহ তিনি তদন্ত করে দেখেছেন, সেখানে একতরফা কোনো ঘটনা ঘটেনি। এরপর আর এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেন তিনি। পুলিশকেও অহেতুক গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন সাংসদ।
জানা গেছে, ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দুটি অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী রিয়াজুল হান্নান। প্রথমটিতে তাঁর প্রচারের মাইকের ওপর হামলা ও দ্বিতীয়টিতে তাঁর দলের এক নেতার ওপর হামলার অভিযোগ করেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি তিনি। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নিয়মিত ভোটের মাঠে থেকে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। অন্য নির্বাচনী এলাকার মতো পুলিশের হয়রানি বা বাধার মুখে এক দিনও এলাকা ত্যাগ করতে হয়নি তাঁকে।
এ প্রসঙ্গে রিয়াজুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, খুব ভালো পরিবেশ, তা বলা যাবে না। কোথাও কোথাও বাধা আছে। তবে গাজীপুরের অন্য আসনের চেয়ে অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো।
গাজীপুর শহর থেকে গ্রামের ভেতর দিয়ে কাপাসিয়া যেতে দুর্গাপুর ইউনিয়নের পলাশপুর গ্রাম। পলাশপুর বাজার এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে শত শত পোস্টার। সঙ্গে আছে কিছু ব্যানারও। ওই বাজারে নৌকা, ধানের শীষ, হাতপাখাসহ প্রায় সব প্রার্থীর পোস্টারই রয়েছে। বাজারের দোকানি ও তরুণ ভোটার সজীব হোসেন বলেন, এই বাজারে সব দলের পোস্টার আছে। যার যার কর্মীরা টাঙিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাউকে বাধা দিচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা কারখানা শ্রমিক আফজাল হোসেন বলেন, তাঁদের এলাকায় ভোটের পরিবেশ অনেক ভালো, কোনো হানাহানি নেই। এরপর টোক নয়নপুর বাজারের নিরিবিলি হোটেলের মালিক তোতা মিয়া বলেন, দেশের অন্য জায়গার মতো কাপাসিয়ায় কোনো ঝামেলা নেই। এখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে।
শুধু নৌকা বা ধানের শীষ নয়, অন্য পাঁচ প্রতীকের প্রার্থীরাও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই। সিপিবির প্রার্থী মানবেন্দ্র দেব প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন হেঁটে বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করছেন, কোথাও কোনো বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রার্থী নাজিম উদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই কোনো বাধা ছাড়া প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সারা দেশের মতো এখানেও প্রচারে সরব ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। দলীয় প্রতীক হাতপাখার প্রচারে গতকাল বিকেলে কাপাসিয়া সদর বাজারে প্রার্থীকে নিয়ে সভা করেছেন দলটির কর্মী-সমর্থকেরা। সভা শেষে একটি মিছিলও বের করেন তাঁরা।
কাপাসিয়ায় নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে হাতপাখার প্রার্থী নূরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সভা, মিছিল ও গণসংযোগ করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দল বা অন্য কেউ কোথাও বাধা দেয়নি।
কোনো ধরনের বাধা ছাড়া নির্বাচনের প্রচার চালিয়ে যাওয়ার কথা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) টেলিভিশন প্রতীকের প্রার্থী সারোয়ার-ই-কায়নাত ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী জুয়েল কবির। তাঁরা বলেন, কাপাসিয়ায় নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছে।