কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ ও যুবনীতির বাস্তবায়ন দেখতে চান তরুণ ভোটাররা। তাঁরা বলছেন, শুধু শহুরে তরুণদের উন্নয়ন নয়, ভাবতে হবে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণদের কথাও। আর নির্বাচনের পর দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতাও দেখতে চান তাঁরা।
গতকাল মঙ্গলাবার প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘নির্বাচন ২০১৮: তারুণ্যের ইশতেহার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারী তরুণ ভোটাররা এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর আয়োজনে এই গোলটেবিল বৈঠকের সহযোগিতায় ছিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।
নির্বাচনের পর সব বিভেদ ভুলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সবার ঐকমত্য দরকার বলে মনে করেন মডেল ও অভিনেত্রী সাবিলা নূর। বৈঠকে তিনি বলেন, তরুণদের বেকারত্ব ঘোচাতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার ওপরও জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, এ বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনও হলো। সেসব আইনের বাস্তবায়ন দেখতে চায় তরুণেরা।
অ্যাকশনএইডের প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক মো. নাজমুল বলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থায় তরুণদের বেকারত্ব দূর হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারে মনোযোগ দিতে হবে। তরুণদের নেতৃত্ব অর্জন করাতে সহযোগিতা করতে হবে। আইআইডির স্বেচ্ছাসেবক অরূপ কুমার দাশ বলেন, তরুণদের জন্য জাতীয় যুবনীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি। যুবনীতি বাস্তবায়ন করা হলেই তরুণদের অধিকার নিশ্চিত হবে। নির্বাচনের আগে দলগুলো ইশতেহার দেয়। আগের ইশতেহারগুলো কি তারা বাস্তবায়ন করেছে? নির্বাচনের পর দেশের তরুণেরা কোনো মারামারি, হানাহানি দেখতে চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের শিক্ষার্থী জুবেলী খানম বলেন, প্রতিবছর ২৬ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। এটা যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি একই সঙ্গে হতাশাব্যঞ্জক। এই সংখ্যক তরুণের সবাই কি চাকরি পাচ্ছে? নতুন সরকারকে তরুণদের জন্য ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
অ্যাকশনএইডের স্বেচ্ছাসেবক তাসনিয়া বাহার চৌধুরী বলেন, তারুণ্যের ইশতেহারে অবশ্যই থাকতে হবে নারীদের নিরাপত্তা। যে সরকারই আসুক তারা যেন নারীদের নিরাপত্তা, হিজড়াদের কর্মসংস্থান, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি বিষয়গুলো খেয়াল রাখে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরীফ আশিকুজ্জামান বলেন, সবার আগে দরকার শিল্প ও শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। তরুণদের জন্য সরকার সহজ ঋণ দিয়েছে। কিন্তু অনেকেই তা জানে না। এর সঠিক প্রচার দরকার।
নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে দেশের সংবিধান জানার ওপর জোর দেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আসরাফুন্নেসা মৌরী। তিনি বলেন, সংবিধানে তরুণদের জন্য সুস্পষ্টভাবে অধিকারের কথা লেখা আছে। নিজের অধিকারের জায়গাটি আগে জানতে হবে।
আইআইডির স্বেচ্ছাসেবক যারিন তাছনিম বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াটা জরুরি। যাঁরা সরকারিভাবে বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদেরও বাড়তি টাকা গুনতে হয়, হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকার যেন তরুণ শ্রমিকদের ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পারে।
অ্যাকশনএইডের স্বেচ্ছাসেবক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, প্রতিযোগিতা ও বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশে শিল্পায়নটা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। আবার একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করতে করতে তার চাকরির বয়স চলে যায়। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা যেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ায়।
আইআইডির স্বেচ্ছাসেবক অলিভা রানী শীল বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের যে বৈষম্য সেটাতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বাধা পায়। সরকারেরই দায়িত্ব মেয়েদের নিরাপদ চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা। তিনি আরও বলেন, মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা করাসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও তরুণেরা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে দেখতে চায়।
গ্রামীণ তরুণদের উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে আইআইডির স্বেচ্ছাসেবক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণদের একটা বড় অংশ গ্রামে থাকে। তাই শুধু নগরের তরুণদের উন্নয়ন নয়, গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলের তরুণদের উন্নয়নের কথাও ভাবতে হবে। অঞ্চলভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠলে শহরের ওপর চাপ কমবে।