নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘হিরো আলম পর্যন্ত হাইকোর্ট দেখায়। সেও বলে যে “নির্বাচন কমিশনকে আমরা হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ছি।” বোঝেন অবস্থা!’
বুধবার সকালে আগারগাঁওয়ের ইটিআই ভবনে প্রশিক্ষণে এ কথা বলেন ইসি সচিব। নির্বাচনের দিন সফটয়্যার–সংক্রান্ত ইলেকশান ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (ইএমএস), ক্যানডিডেট ইনফরমেশান ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (সিআইএমএস) এবং রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (আরএমএস) বিষয়ে এ প্রশিক্ষণ হয়।
ইসি সচিব বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেক আসনে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। কিছু বোধ হয় আরও পরিবর্তন হবে। যেখানে প্রার্থী একদম চূড়ান্ত হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যালট ছাপিয়ে ফেলব। কারণ আমরা চাই এক সপ্তাহ পূর্বে ব্যালট মাঠে চলে যাবে। যেখানে সমস্যা আছে সেখানে ব্যালট আমরা একটু পরে ছাপাব। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসলে আমাদের সেইভাবে অ্যাকুমুলেটেড করতে হয়।’
হেলালুদ্দীন বলেন, ‘হিরো আলম পর্যন্ত হাইকোর্ট দেখায়। সেও বলে যে “নির্বাচন কমিশনকে আমরা হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ছি।” বোঝেন অবস্থা! সে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী। সে বগুড়া থেকে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেছে। তারপর আমাদের কাছে আপিল করেছে। মাননীয় কমিশন তার আপিল বাতিল করেছে। সে হাইকোর্টে গিয়ে তাঁরটা ক্লিয়ার করে আসছে। তারপর আগের তালিকার সঙ্গে তার (হিরো আলম) প্রতীক সংযুক্ত করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা আসতেছে। আমরা এগুলো নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন এবং ব্যতিব্যস্ত।’
ইসি সচিব আরও বলেন, ‘৩০০ আসনে নির্বাচন করা একটা বিশাল ব্যাপার। দেশে যদি রাজনৈতিক পরিবেশ থাকে। তাহলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। আর যদি সুপরিবেশ না থাকে, সব সময় আমাদের বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়।’ তিনি বলেন, বর্তমানে টেলিভিশন খুললেই, পত্রিকা খুললেই নির্বাচন নিয়ে কথা দেখা যায়। বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ সংসদ নির্বাচন নিয়ে উন্মুখ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনাররা রুট লেভেল পর্যন্ত যাচ্ছেন, সভা করছেন, কথা বলছেন। এর উদ্দেশ্য নির্বাচনটা যাতে সুশৃঙ্খল হয়, সুন্দর, সুষ্ঠু হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এত ব্যাপক কর্মযজ্ঞ কিন্তু আর কখনো গ্রহণ করা হয়নি। আমি ৩১ বছর ধরে মাঠে আছি। আমি নিজে রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ এর আগে কখনো দেখিনি। আবার নতুন সঙ্গে যোগ হয়েছে ইভিএম। ইভিএম নিয়েও আমরা নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে ইসি সচিব বলেন, ‘এখন আমাকে একটি কথা বলেন তো, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানেরা আমাদের অনুরোধ জানিয়েছেন ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনার জন্য। ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনলে আপনাদের রেজাল্ট পাঠাতে খুব অসুবিধা হবে?’ প্রশিক্ষণার্থী সচিবেরা এ সময় বলেন, সমস্যা হবে। তখন সচিব বলেন, ‘আপনারা রেজাল্ট পাঠাবেন কখন থেকে? বিকেল ৫টা থেকে। ৫টার আগ পর্যন্ত যদি গতি কম থাকে?’ তখন প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, সমস্যা নেই।
ইসি সচিব বলেন, ‘আচ্ছা আমরা বিষয়টি দেখব। তাহলে ৪টার পড়ে যদি ফুল স্পিডে ইন্টারনেটের লাইন থাকে, তবে কোনো সমস্যা হবে না। বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব।’
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে সচিব আরও বলেন, ‘আপনারা খুব সতর্ক হয়ে কাজ করবেন। একটা সংখ্যার এদিক–সেদিক হলে কিন্তু ওই এলাকায় মারামারি শুরু হয়ে যাবে। এগুলো আপনারা সাবধানে করবেন। টেলিভিশনের একটা বিজ্ঞাপন দেয় যে, যুদ্ধের সময় সেনাপ্রধান বলল, “সবাই জাগো।” কিন্তু সবাই শুনল ভাগো। ভাগো শুনে সবাই ভেগে গেছেন। কথার শব্দের হেরফেরে যেমন একটা টোটাল অ্যারেঞ্জমেন্ট নষ্ট হয়ে যায়, ঠিক তেমনি আমাদের একটা সংখ্যার কারণেও কিন্তু একটা এলাকায় অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে। আপনারা খুব সতর্কতার সঙ্গে, সুন্দরভাবে, ঠান্ডা মাথায় এ কাজটা করবেন।’