অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিকারুননিসার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ
পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুলের গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধিদের একজন মুশতারী সুলতানা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
মুশতারী বলেন, ‘অরিত্রীর সহপাঠীরা যারা আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা অরিত্রীর ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। ছাত্রীরাও গভীরভাবে শোকাহত। তাদের বান্ধবী মারা গেছে, পড়াশোনা করতে পারছে না। এ কারণে পরীক্ষা বাতিল করেছি।’
অধ্যক্ষ কোথায় জানতে চাইলে বলেন, ‘তিনি অসুস্থ। আমরা গভর্নিং বডির সদস্যরা মিলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোচিং ও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মুশতারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে ৭০০ জনের মতো শিক্ষক আছে। ২ থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষক কোচিং করায়। সবাই এক রকম নয়। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা শিক্ষার্থী অভিভাবকদের লিখিতভাবে দিতে বলেছি।’
শিক্ষার্থীদের গভর্নিং বডির পদত্যাগের দাবি বিষয়ে মুশতারী বলেন, ‘এটি তো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তারা পরিবর্তন করে দিলে আমাদের কিছু করার নেই।’
মুশতারী সুলতানা প্রেস ব্রিফিং করার আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিন ফটকের বাইরে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের গিয়ে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ করার বিষয়টি জানিয়ে আসেন।
এদিকে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শাখা প্রধান এবং এক শ্রেণিশিক্ষককে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি। এ জন্য ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি।
আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কমিটি। এই তিন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।
এই তিন শিক্ষক হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখা প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা।
আজও সকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের শাখার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অনেক অভিভাবক।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ এই তিনজনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী।
দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।
অরিত্রীদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।