বিতর্কের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের জয়

>

বাঁ থেকে রিফায়েত জাফির ওয়াফি, দেবজ্যোতি বিশ্বাস, আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা ও বিশাল পোদ্দার। ছবি: খালেদ সরকার
বাঁ থেকে রিফায়েত জাফির ওয়াফি, দেবজ্যোতি বিশ্বাস, আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা ও বিশাল পোদ্দার। ছবি: খালেদ সরকার

৭ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের হানয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি (এবিপি) ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’। বিতর্কের এই ‘এশিয়া কাপে’ স্কুলপর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকার সানিডেল স্কুলের বিতার্কিকদের একটি দল।

‘আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতায় গেলে বিদেশি বিতার্কিকেরা আমাদের দিকে অন্য চোখে তাকায়। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা যে বিতর্কে ভালো, এটা এখন সবাই জানে।’ দেবজ্যোতি বিশ্বাসের এই বক্তব্যকে স্রেফ কথার কথা ভাবার উপায় নেই। প্রমাণ সে সম্প্রতি ভিয়েতনাম থেকে নিয়েই এসেছে। ৭ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর ভিয়েতনামের হানয়ে অনুষ্ঠিত হলো ‘এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি (এবিপি) ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ’। বিতর্কের এই ‘এশিয়া কাপে’ স্কুলপর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকার সানিডেল স্কুলের বিতার্কিকদের একটি দল। দলের সদস্য সানিডেল স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবজ্যোতি বিশ্বাস এবং দশম শ্রেণির আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা।

ভারত, সিঙ্গাপুর, নেপাল, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নিয়েছিল প্রায় ১১২টি দল। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে স্কুলপর্যায়ের বিতর্কের ফাইনালে যে চারটি দল উঠেছে, তার মধ্যে দুটিই বাংলাদেশের। আরও স্পষ্ট করে বললে, দুটি দলই সানিডেল স্কুলের! চ্যাম্পিয়ন দলের কথা আগেই বলেছি। সানিডেলের অপর দলটির দুই সদস্য হলো বিশাল পোদ্দার ও রিফায়েত জাফির ওয়াফি। দুজনই এ বছর এ লেভেল পেরিয়েছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার আমরা দুই দলের চার শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডায় বসেছিলাম।

বড় ভাইদের টপকে ছোট ভাইয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে, তাই বলে বিশাল-রিফায়েতের কি একটু মন খারাপ হলো? প্রশ্ন শুনে দুজন হাসলেন। খুব সুন্দর জবাব দিলেন রিফায়েত, ‘আমরা যেহেতু শেষবার কোনো প্রতিযোগিতায় স্কুলের প্রতিনিধিত্ব করলাম, চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা আমাদের হাতে এলে বেশি ভালো লাগত। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো দুঃখ নেই। সানিডেল ডিবেটিং ক্লাবে আমরা একটা পরিবারের মতো। কোচ সব সময় বলেন, “হারতেই যদি হয়, তাহলে শুধু নিজের স্কুলের কাছে হারবে।” আমাদের স্কুলজীবন শেষ, তবু এখনো আসি, ক্লাবের ছোটদের ক্লাস নিই। এর আগে বড় ভাইরাও আমাদের ক্লাস নিয়ে গেছেন।’

খুব ছোটবেলা থেকে বিতর্কের চর্চা করে সানিডেলের শিক্ষার্থীরা। বড় মঞ্চগুলোতেও তাই তারা আত্মবিশ্বাস হারায় না। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে যাওয়ার পর সানিডেলের প্রতিপক্ষ ছিল চীন ও সিঙ্গাপুরের বিতার্কিকদের দুটি দল। আল ওয়াসী মো. ফাহিমউদ্দৌলা বলল, ‘ভয় নয়, রোমাঞ্চটাই কাজ করছিল বেশি।’ ভিয়েতনাম ঘুরে আসা সানিডেলের চার শিক্ষার্থীর মধ্যে আল ওয়াসী সর্বকনিষ্ঠ। কিন্তু তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও বেশ ভারী। এর আগে স্কুলের হয়ে বিতর্ক করতে ভারতে গিয়েছিল সে। বাকি তিনজনের মধ্যেও কেউ জার্মানি, কেউ ক্রোয়েশিয়া ঘুরে বিতর্ক করে এসেছে। অভিজ্ঞতার জোরে ব্যক্তিগত পর্যায়েও ভিয়েতনাম থেকে বেশ কিছু পুরস্কার অর্জন করে ফিরেছে সানিডেলের ছাত্ররা। দেবজ্যোতি বিশ্বাস পেয়েছে টুর্নামেন্ট-সেরা বক্তার স্বীকৃতি। ফাইনালে সেরা বক্তা হয়েছে রিফায়েত।

গত বছর এশিয়ান ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেরা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) শিক্ষার্থীদের একটি দল। এ বছর আইবিএ ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছালেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছে ছোটরা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পেরিয়ে লাল-সবুজের পতাকাটাই তো শিক্ষার্থীদের বড় পরিচয়!