বিশ্বে অতি ধনীর উত্থানে শীর্ষে বাংলাদেশ
>
- ওয়েলথ এক্স নামের মার্কিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন
- প্রতিবেদনের নাম ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮
- ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়
- প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র
- বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে
- ধনকুবের বৃদ্ধির হারে চীনকে হারিয়ে বাংলাদেশ শীর্ষে
অতি ধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।
ওয়েলথ-এক্স নামের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান এই তথ্য দিয়ে বলেছে, ‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়। এ অবস্থান বাংলাদেশের।’
ওয়েলথ এক্স-এর তৈরি প্রতিবেদনটির নাম ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮’। ৫ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়। ওয়েলথ এক্স মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ইনসাইট ভেঞ্চার পার্টনারসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ওয়েলথ এক্সের দাবি, তাদের তথ্যভান্ডারে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ধনকুবেরের তথ্য রয়েছে। ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা ২৫২ কোটি টাকার সম্পদ থাকলে তাঁদের আলট্রা ওয়েলদি বা অতি ধনী হিসেবে গণ্য করে সংস্থাটি।
ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮১০-এ। তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। সম্পদশালীদের সংখ্যা বেশি বেড়েছে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয়। এশিয়ায় ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
অবশ্য এখনো ধনকুবেরের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন ও ইউরোপের দেশগুলোতেই বেশি। ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ধনকুবেরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৯ হাজার ৫৯৫-তে। জাপানে ১৭ হাজার ৯১৫, চীনে ১৬ হাজার ৮৭৫, জার্মানিতে ১৫ হাজার ৮০, কানাডায় ১০ হাজার ৮৪০, ফ্রান্সে ১০ হাজার ১২০, হংকংয়ে ১০ হাজার ১০, যুক্তরাজ্যে ৯ হাজার ৩৭০, সুইজারল্যান্ডে ৬ হাজার ৪০০ ও ইতালিতে ৫ হাজার ৯৬০ জন।
শীর্ষ ১০টি দেশ বাদে অন্য দেশগুলোয় ধনকুবেরের সংখ্যা কত, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশে ধনকুবের কতজন, তা জানা যায়নি। ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে ধনকুবেরের সংখ্যা বেশি বেড়েছে চীন ও হংকংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। তবে জাপান, কানাডা, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র এদিক দিয়ে স্থির হয়ে আছে।
তবে অর্থনীতিবিদেরা খুব ইতিবাচক ভাবে দেখছেন না বিষয়টিকে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আসছে, এটা ঠিক। কিন্তু একটা শ্রেণির হাতে বড় অংশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। ফলে বৈষম্য অনেক বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশে স্বজনতোষী পুঁজিবাদ বা ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ব্যাংকের মতো ব্যবসা পাচ্ছে সরকারের কাছের লোকেরা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। এতেই একটা শ্রেণির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
কোন অঞ্চলে কত ধনকুবের
কোন অঞ্চলে ধনকুবেরের সংখ্যা কত, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে, উত্তর আমেরিকায় ধনকুবেরের সংখ্যা ৯০ হাজার ৪৪০। ৭২ হাজার ৫৭০ জন ধনকুবের নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপ। এর পরের অবস্থান এশিয়ার। এশিয়ার দেশগুলোয় ধনকুবের আছেন ৬৮ হাজার ৯৭০ জন। মধ্যপ্রাচ্যে ধনকুবের আছেন ৯ হাজার ৯০ জন। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোয় এ সংখ্যা ৮ হাজার ৫৫০। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় ধনকুবেরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০। সবচেয়ে কম ধনকুবের আছেন আফ্রিকায়, সেখানে সংখ্যাটি ২ হাজার ৪৯০।
ওয়েলথ এক্স দাবি করেছে, তারা সম্পদশালীদের সংখ্যা বের করতে ওয়েলথ অ্যান্ড ইনভেস্টেবল অ্যাসেটস মডেল নামের একটি কৌশল ব্যবহার করেছে। তারা কাজ করেছে দুই ধাপে। প্রথমত, সংস্থাটি ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব করতে অর্থনৈতিক গণিতের ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা বিবেচনায় নিয়েছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আকার, করহার, আয়, সঞ্চয়, পুঁজিবাজারের আকারের তথ্য। এসব তথ্য তারা সংগ্রহ করেছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ), সংশ্লিষ্ট দেশের পরিসংখ্যান সংস্থা, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) মতো সংস্থার কাছ থেকে। এরপর ওয়েলথ এক্স দেশের মধ্যে সম্পদের বণ্টনের হিসাব করেছে।
ওয়েলথ এক্স বলছে, তাদের কাছে যে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি সম্পদশালীর তথ্য রয়েছে, তা-ও তারা এ হিসাবে ব্যবহার করেছে। সংস্থাটির দাবি, তাদের তথ্যভান্ডারে থাকা সম্পদশালীদের আর্থিক অবস্থা, পেশাজীবন, পরিচিত সহকারী, সংশ্লিষ্টতা, পারিবারিক ইতিহাস, শিক্ষা, শখ, দানখয়রাত ইত্যাদি নানা তথ্য তাদের হাতে রয়েছে।
দেশে ধনীরা আরও ধনী
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকায়। বিপরীতে একই সময় সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ। তাদের মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়, যা ২০১০ সালে ১ হাজার ৭৯১ টাকা ছিল।