আকাশভরা মেঘ। শেষ বিকেলেই তাই নেমে গেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। তবু বুলবুল, দোয়েল, কমলাবউ, ফিঙে ও অন্যান্য পোকাখেকো পাখি উড়ে উড়ে খেয়ে চলেছে উড়ন্ত পিপীলিকা বা ওড়লা পোকা। ঘণ্টাখানেক ধরে একটি মাটির ঘরের ডোয়ার ফাটল থেকে বেরিয়ে শত শত ওড়লা পোকা উড়ছে আকাশমুখে। এতক্ষণে উড়ে এল চামচিকা ও দিনেকানা পাখিরা। ওড়লা পোকা ওদের কাছে উপাদেয় খাবার। তারপরে পাশের বাগান থেকে যেন ছিটকে বেরিয়ে এল পাঁচটি পুঁচকে প্যাঁচা। ওরাও উড়ে-ঘুরে ওড়লা খেতে শুরু করেছে মাত্র। সহ্য হলো না দোয়েল-ফিঙেদের। করল ধাওয়া। প্যাঁচাগুলো যুদ্ধবিমানের কৌশলে আক্রমণ এড়িয়ে খেয়ে চলল পোকা। এমন রসাল-মজাদার খাবার তো মেলে না সহজে!
পুতুল পুতুল আর হাসি হাসি চেহারার এই খুদে প্যাঁচা ছোট নিমপোখ নামেও পরিচিত। অতি লাজুক ও ভীত স্বভাবের কারণে এরা গভীর প্রাকৃতিক বনের ঝোপঝাড় ও গ্রামীণ বনের বাঁশঝাড়, শেওড়া, গাব-বিলেতি গাবগাছসহ লতাপাতায় ছাওয়া জায়গায় দিনটা কাটিয়ে দেয় ঝিমিয়ে-ঘুমিয়ে। আত্মগোপনে পারদর্শী খুদে প্যাঁচারা গাছ, ডালপালা, বাঁশের রঙের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে।
নিশাচর এই প্যাঁচাদের খাদ্যতালিকায় আছে মূলত বিটল পোকা, মথস, গিরগিটি ও ব্যাঙের ছাসহ ছোট পাখিদের ডিম-ছানা এবং কেঁচো, অন্যান্য পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ। সুযোগ পেলে গেছো ইঁদুর, নেংটি ইঁদুর ও কাঠবিড়ালির বাসা ভেঙে চোখ না ফোটা ছানাদের খায়।
খুদে প্যাঁচাদের মাথার তালু-ঘাড়-গলা-বুক ও ডানার উপরিভাগসহ দুচোখের পাশের রং লালচে। কপাল-মাথা-বুকে খাড়া খাড়া কালচে টান ও পাখার প্রান্তদেশে সাদা সাদা টান আছে। মাথার দুপাশের শিংসদৃশ পালকগুচ্ছের রংও লালচে। শিংয়ের গোড়া থেকে দুটি সাদাটে-ধূসর চওড়া রেখা ধূসরাভ ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে নেমে মুখের পাশটা পর্যন্ত গেছে। মুখের মানচিত্র আকর্ষণীয়-দর্শনীয়। চোখের বৃত্ত হলুদ, মণি টলটলে কালো। পা ধূসরাভ। পেট সাদাটে, তাতে খাড়া খাড়া লালচে টান ও ছিট আছে।
এদের কণ্ঠস্বর সুরেলা-ধাতব ও মোলায়েম। ডাকটা শোনায় ‘হুট চু হুট চু...হু...ট’। থেমে থেমে ডাকে। প্রেম মৌসুমে ডাকাডাকি বেড়ে যায়।
বাসা করে গাছের খোঁড়লে-কোটরে। ডিম হয় তিন-চারটি। অনেকটাই কচ্ছপের ডিমের মতো। মা-বাবা দুজনেই পালা করে তা দেয় ডিমে। ছানাদের রং সাদা।
খুদে প্যাঁচার ইংরেজি নাম অরিয়েন্টাল স্কোপস আউল। বৈজ্ঞানিক নাম otus sunia। দৈর্ঘ্য ১৯ সেমি। গড় ওজন ১৩০ গ্রাম।