১০ নারী পেলেন 'অনন্যা' সম্মাননা
কুড়িগ্রামের স্বপ্না রানীর স্বপ্নটা বিস্তর। তবে সেখানে দুঃস্বপ্নও ছিল। প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে তিনি বের হন জীবিকার সন্ধানে। সাহস ও চেষ্টার মাধ্যমে দাঁড়িয়েছেন নিজের পায়ে। এখন তিনি পিকআপ চালানো শিখতে চান। এই কৃতী নারীকে আজ দেওয়া হয়েছে অনন্যা সম্মাননা।
রাজধানীর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আজ শনিবার বিকেলে ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-২০১৭’ শীর্ষক সম্মাননা দেওয়া হয়। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১০টি বিভাগে ১০ জন নারীকে নারীবিষয়ক সাময়িকী পাক্ষিক অনন্যা সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
এ বছর সম্মাননা পেয়েছেন সংগীতে চিরকুটের ব্যান্ড দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শারমিন সুলতানা সুমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সাংবাদিকতায় ডিবিসি নিউজের সম্পাদক নবনীতা চৌধুরী, কুড়িগ্রামের অটোরিকশাচালক স্বপ্না রানী, তৃতীয় লিঙ্গ অধিকারকর্মী নাদিরা খানম, খেলাধুলায় মারিয়া মান্ডা, ক্রীড়া সংগঠক মাহফুজা আক্তার কিরণ, সমাজসেবায় নাজিয়া জাবিন, নারী উদ্যোক্তায় ফারজানা চৌধুরী। এ ছাড়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন দেশের প্রথম নারী বিভাগীয় কমিশনার মোছাম্মাৎ নাজমানারা খানুম। তবে তিনি অনিবার্য কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
দিনাজপুরের মেয়ে নাদিরা খানম তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে কাজ করেন। তিনি হতে চান রাজনীতিক। রংপুরে সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে অনুষ্ঠানে তাঁর সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। নাদিরা বলেন, ‘আমরা অবহেলিত, লাঞ্ছিত, অনুগৃহীত হতে আর চাই না। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, সংসদে আমাদের কথা বলার জন্য কোনো সংরক্ষিত আসন যেন দেওয়া হয়।’
১৯৯৩ সাল থেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য নারীদের এই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৪০ জন কৃতী নারী এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্যনন্দন দল নৃত্য পরিবেশন করেন। ২০১৫ সালে অনন্যা পুরস্কার পাওয়া শিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ অনুষ্ঠানে দুটি গান গেয়ে শোনান। এরপর সম্মাননা পাওয়া ১০ জন নারীর জীবন, কর্ম ও অবদানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি আপ্লুত এই পুরস্কার পেয়ে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব নারী অবদান রাখছে, অনন্যা তাদের নিয়ে আসছে, সম্মানিত করছে।’
অনন্যার সম্পাদক ও প্রকাশক অনুষ্ঠানে তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই দেশের নারীরা এগিয়ে যাবে। এই স্বীকৃতি নারীদের আরও অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘যাঁরা অনন্যা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নিজের জায়গায় যুদ্ধ জয়ের গল্প আছে। আমরা বাবা-মা, বন্ধু—সবাইকেই আমাদের পাশে চাই, সবাই পাশে থাকলে নারীরা এগিয়ে যাবেনই।’
প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা আহমেদ বলেন, ‘আমি তাঁদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই। তাঁরাই দেশকে তুলে ধরবেন বিশ্বের সামনে। কী সব পরিস্থিতিতেও তাঁরা অসাধারণ কাজ করছেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে।’
নারীর চোখে বিশ্ব দেখার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৮৮ সালে পাক্ষিক অনন্যা যাত্রা শুরু করে। অনন্যা শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্বের নারীর সক্ষমতা ও অগ্রগতিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরে। লেখনীর মাধ্যমে অনন্যা তুলে ধরে নারীর মানবিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারের বিষয়গুলো। নিয়মিত প্রকাশিত হয় লাইফস্টাইল, সাহিত্য, বিনোদন ও খেলাধুলাবিষয়ক লেখা।