ফেনীতে বাসায় আগুনে দগ্ধ পরিবারটির কেউ বেঁচে রইলেন না

আশীষ চন্দ্র সরকার, স্ত্রী টুম্পা রানী সরকার ও তাঁদের ছেলে রিক সরকারছবি: সংগৃহীত

ফেনীতে বাসায় আগুনে দগ্ধ আশীষের পরিবারের তিনজনের আর কেউ বেঁচে রইলেন না। আগুন লাগার ঘটনার ১৩ দিনের মধ্যে একে একে মারা গেলেন আশীষ চন্দ্র সরকার (৪০), তাঁর একমাত্র সন্তান রিক সরকার (৯) ও স্ত্রী টুম্পা রানী সরকার (৩০)। তাঁরা তিনজনই রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সর্বশেষ গত সোমবার হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যু হয় আশীষের স্ত্রী টুম্পা রানী সরকারের। এর আগে ৫ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছেলে রিক সরকার (৯) এবং ৩১ ডিসেম্বর হাসপাতালের হাইডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) মারা যান আশীষ চন্দ্র সরকার।  

গত ২৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের ইতালি ভবন-২-এর পঞ্চম তলার বাসায় আগুন লাগে। এ ঘটনায় দগ্ধ হন আশীষ, টুম্পা ও রিক। গ্যাসের চুলায় তিতাসের সংযোগ লাইন থেকে আগুন লাগার ঘটনার কথা স্বজনদের বলেছিলেন আশীষ ও টুম্পা।

আশীষের ছোট ভাই পরিতোষ চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে জানান, সোমবার তাঁর বউদি টুম্পার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার সময় তাঁকে এইচডিইউ থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে টুম্পার মৃত্যু হয়। বউদিকে সৎকার করার জন্য সন্ধ্যায় তাঁরা মরদেহ নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দিকে রওনা দিয়েছেন। এর আগে আশীষ ও রিকেরও শেষকৃত্য হয় ধোবাউড়ায়।

ধোবাউড়ায় আশীষের বাবা-মা ও ভাই-বোনেরা বসবাস করেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে আশীষ সবার বড় ছিলেন। তিনি চাকরির সুবাদে ফেনীতে থাকতেন। ফেনীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষণ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। রিক ফেনীতে একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত।

আরও পড়ুন

দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর ২৭ ডিসেম্বর বুধবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন মো. তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, আশীষের ৮২ শতাংশ, টুম্পার ৬০ শতাংশের বেশি এবং রিকের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। শুরু থেকেই রিককে আইসিইউতে নেওয়া হয়। আর আশীষ ও টুম্পাকে এইচডিইউ ভর্তি করা হয়। তিনজনের অবস্থাই সংকটাপন্ন ছিল।

আরও পড়ুন

ওই সময় আশীষের ভাই পরিতোষ প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তাঁর দাদা-বউদি তাঁকে বলেছেন, বাসার দরজা-জানালা সব সারা দিন বন্ধ ছিল। রাতে দাদা অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর বউদি ভাত রান্নার জন্য চুলা জ্বালাতে যান। চুলা জ্বালানোর পরপরই দুই কক্ষের বাসায় আগুন লেগে যায়। আগুন লাগা অবস্থায় অবস্থায় তাঁরা নিজেরাই দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, চিৎকার শুনে তাঁরা গিয়ে দেখেন, শরীরে আগুন নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামছেন তিনজন। কাপড় জড়িয়ে দিয়ে সেই আগুন নেভান তাঁরা।