আওয়ামী লীগের উপকমিটিতে পিএসসির সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়েছেন। সাংবিধানিক পদে থেকেও দেলোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক দলের কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। এর মধ্য দিয়ে পিএসসির সদস্য হিসেবে নেওয়া শপথের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত সোমবার আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটি ঘোষণা করা হয়। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কমিটির অনুমোদন দেন। উপকমিটিতে অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জমিরকে চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এ কমিটি ৫৬ সদস্যের।
আওয়ামী লীগের নতুন ঘোষিত আন্তর্জাতিক–বিষয়ক উপকমিটিতে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে নাম রয়েছে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের। অধ্যাপক দেলোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক। তিনি জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অধ্যাপক দেলোয়ারকে পিএসসির সদস্যপদে নিয়োগ দেন। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পিএসসির সদস্য হিসেবে শপথ নেন দেলোয়ার হোসেন। দেড় বছর ধরে পিএসসির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করবেন, তবে এর আগেই বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হলে তখনই সদস্যপদের মেয়াদ শেষ হবে।
পিএসসি নানা ধরনের ক্যাডার-নন ক্যাডার পদে নিয়োগ, বিভাগীয় পরীক্ষাসহ নানা কাজে যুক্ত। বিসিএস পরীক্ষার সব কার্যক্রম; যেমন ভাইভা নেওয়া, বিসিএসের কার্যক্রম সমন্বয় করা, ফল প্রকাশ বা খাতা দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সমন্বয় করেন পিএসসির সদস্যরা। বিসিএসসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় যে ভাইভা নেওয়া হয়, সেই বোর্ড পরিচালনা করেন পিএসসির সদস্য।
চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও একাধিক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, পিএসসির সদস্যরা নিরপেক্ষতার জন্য শপথ নেন। সেখানে কোনো দলীয় কমিটিতে থাকা ব্যক্তি পিএসসির সদস্য হিসেবে থাকলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের ভাইভাতে বিশেষ সুবিধা দেবেন না, তার নিশ্চয়তা কী!
এ বিষয়ে সরকারি চাকরির বিধিবিধানের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পিএসসি তো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়। পিএসসিকে হতে হবে নিরপেক্ষ। দলীয় কোনো লোকের সেখানে থাকা উচিত নয়। পিএসসির সদস্য হিসেবে নিরপেক্ষতার শপথ নিতে হয়। দলীয় কমিটির সদস্য হলে শপথের আর মর্যাদা থাকে না।
পিএসসির সদস্য হয়েও রাজনৈতিক দলের কমিটিতে সদস্য হওয়ার বিষয়ে জানতে পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের জীবনবৃত্তান্তের তথ্য অনুযায়ী, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। পরে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জাপান থেকে এশিয়া প্যাসিফিক ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে মাস্টার্স করেন। পরে জাপানের ফেরিস ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো সদস্যপদ চাইনি। বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে কমিটিতে আমাকে নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তির নিজস্ব রাজনৈতিক মতবিশ্বাস থাকতেই পারে। সংবিধান অনুযায়ী চলার শপথ নিয়েছি, সেভাবেই চলব। কেউ প্রশ্ন তোলার হলে তুলতে পারে।’