ঢাকা-বরিশালে অনুষ্ঠিত ‘মার্কস অ্যাক্টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’
উৎসবের আনন্দে দাবার বোর্ডে বুদ্ধির লড়াই
ছুটির দিন, রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়ামপাড়া সুনসান। দুপুরের তপ্ত রোদে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। কিন্তু কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখর শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স। মেধা বিকাশ ও বুদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে এবং আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে চলছে ‘মার্কস অ্যাক্টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতা। ‘হয়ে ওঠো আগামীর গ্র্যান্ডমাস্টার’ স্লোগানে প্রতিযোগিতাটি দেশের স্কুলভিত্তিক দলগত দাবার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা জোন-১ ও জোন–২–এ আনন্দমুখর পরিবেশে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে চেস কার্নিভ্যাল। এ ছাড়া ঢাকার বাকি চারটি জোনে পর্যায়ক্রমে চেস কার্নিভাল ও চেস চ্যাম্পস অনুষ্ঠিত হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দেশসেরা দাবাড়ু হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতির পাশাপাশি ছিল উৎসবের আমেজ। প্রতিযোগী ছাড়াও যেকোনো স্কুলশিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করলেই চেস কার্নিভ্যালে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। দিনব্যাপী এ আয়োজনে হাসি-খেলা-গানে কেটেছে আনন্দঘন মুহূর্ত। উৎসবে অংশ নিতে আসা মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র শাহীন আলম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ ছিল। তাই এ উৎসবে অংশ নিয়েছি। খুবই ভালো লাগছে এত বড় একটি প্রতিযোগিতার অংশ হতে পেরে।’
দাবা খেলা ছাড়াও শিশু–কিশোরেরা যেমন খুশি তেমন সাজো, মেমোরি টেস্ট ও ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া ‘চেস কার্নিভ্যাল’জুড়ে ছিল দাবা খেলাবিষয়ক পাপেট শো, ম্যাজিক শো, বায়োস্কোপ, রিং গেম, ডার্টবোর্ড ইত্যাদি বিভিন্ন কার্যক্রম। উৎসবের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছিল দাবার লড়াই। অনেকেই আবার মেতে ছিল বিশালাকারের রাজা-মন্ত্রী, হাতি-ঘোড়া–সৈন্যদের ডামির সঙ্গে ছবি তোলায়।
ঢাকা জোন–১
‘মার্কস অ্যাক্টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’–এর ঢাকা জোন-১–এর প্রাথমিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনে। এখানে অংশ নিয়েছে ঢাকা জোন-১–এর ৭১টি স্কুল দাবা দল, যেখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে ৮টি স্কুল দাবা দল বাছাই করা হয়। ঢাকা জোনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (আইডিয়াল–১)। চ্যাম্পিয়ন দলের নেতৃত্ব দিয়েছে শংকর কুমার মণ্ডল। অন্য সদস্যরা হলেন জুবায়ের ইশায়াত, ইসরাত জাহান দিবা, আয়ান রহমান, সৌর দীপ দত্ত ও রিদওয়ান রাব্বানী। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে যথাক্রমে সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (পঞ্চবর্ণ–২)। চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে যথাক্রমে সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (স্পার্টান্স) ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (আইডিয়াল–৪)। ষষ্ঠ হয়েছে পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (জাগ্রত)। সপ্তম ও অষ্টম হয়েছে যথাক্রমে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (আইডিয়াল–৩) ও মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় (রকস্)।
গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি দাবা দল এবং ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপসচিব আশিকুর রহমান মিকু, অ্যাডিশনাল ডিআইজি এবং বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ড. শোয়েব রিয়াজ আলম, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুর রহমান মল্লিক, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের স্কুল দাবা কমিটি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদা হক চৌধুরী মলি, আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সুফিয়ান সাকিল এবং বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি কে এম শহিদউল্যা প্রমুখ।
ঢাকা জোন–২
ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা জোন-২–এর প্রাথমিক পর্ব। ৩৬টি স্কুল দাবা দল এতে অংশ নেয়। পয়েন্টের ভিত্তিতে আটটি দলকে নির্বাচিত করা হয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিম–স্কাই ব্লু)। দলটির অধিনায়ক ছিলেন মো. শওকত সিদ্দিক। বাকি সদস্যরা হলেন তোহামা নোফায়ের, সৈয়দ আহমেদ তাহমিদ, ওয়ার্শিয়া খুসবু, তাহসিনুল হক, যোয়েনা মেহবিশ ও অয়ন কামাল তালুকদার। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে যথাক্রমে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিম-পদ্মা) ও অ্যাসেম্বলি অব গড চার্চ স্কুল। চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে যথাক্রমে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিম-এ) এবং রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিম-বালক)। ষষ্ঠ হয়েছে ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট। সপ্তম হয়েছে ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল (টিম-এ) এবং অষ্টম স্থান লাভ করেছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিম-ব্লু)।
গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি দাবা দল এবং ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাব উদ্দিন শামিম, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুর রহমান মল্লিক, সহসভাপতি কে এম শহিদউল্যা, স্কুল দাবা কমিটি এবং কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদা হক চৌধুরী মলি প্রমুখ।
বরিশালে খুদে দাবাড়ুদের মিলনমেলা
জেলা পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বরিশাল জেলার প্রাথমিক পর্ব। এখানে অংশগ্রহণ করেছিল বরিশাল জেলার ৬৪টি স্কুল দাবা দল। যেখান থেকে পয়েন্টের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয় আটটি দল। বরিশাল বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বরিশাল জেলা স্কুলের ‘শাপলা টিম’। মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন টিমের অন্য সদস্যরা হলেন রাইমিন রাকা রাজ্য, রুবাইয়াত আফরোজ অর্ণব, হাসনাইন ইসলাম মুনিম, জুনায়েদ রহমান, উৎস সরকার, এস এম হাবিবুল আলম। প্রথম রানারআপ হয়েছে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে যথাক্রমে শহীদ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বরিশাল জেলা স্কুলের ‘দোয়েল টিম’, উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ‘মেঘনা টিম’ ও কাশীপুর মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থান অর্জন করেছে।
গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর দুই দিনব্যাপী সাত রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি দাবা দল ও সেরা ছয় খেলোয়াড়কে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সোহেল মারুফ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যসচিব মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ২১ আগস্ট গাজীপুর থেকে শুরু হয়েছে এই দেশব্যাপী স্কুলভিত্তিক দলগত দাবা প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাটির মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে দেশের সেরা খুদে দাবাড়ুদের। পরবর্তী সময় তাদের দাবাবিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছে ৬৪টি জেলার শিক্ষার্থীরা। স্কুলভিত্তিক দলগুলো শুরুতে খেলবে জেলা পর্যায়ে। এরপর জেলা পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে বিভাগীয় পর্যায়ে। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে।