টিভিবিষয়ক শব্দগুলোর ব্যাখ্যা জানেন তো?

টেলিভিশন—চার কোনার একটি বক্স, আমাদের পরিপূর্ণ বিনোদন দিতে সদা প্রস্তুত। বর্তমানে টেলিভিশনে সংযোজিত নানান প্রযুক্তিবিষয়ক শব্দ ব্যবহার করে এর বৈশিষ্ট্য বুঝিয়ে থাকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিটি শব্দ প্রকাশ করে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এ রকম বিশেষ কয়েকটি শব্দের ব্যাখ্যা নিয়েই এই আয়োজন।

স্মার্ট টিভি

নতুন টিভি কেনার ক্ষেত্রে এখন অনেকেই মাথায় রাখেন ‘স্মার্ট টিভি’র কথা। স্মার্ট টিভি বলতে বোঝায়, যে টেলিভিশন দিয়ে ইন্টারনেট চালানোর সুবিধা এবং এর মাধ্যমে বর্তমান সময়ের স্মার্ট ডিভাইসের সুবিধা পাওয়া যায়। এতে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ থাকে। স্কাইপে, টুইটার, ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। স্মার্ট টিভিতে ওয়াই-ফাই বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুবিধা থাকে। স্মার্ট টিভির রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য বা ফিচার। স্মার্ট টিভিতে থাকে অনেকগুলো ইউএসবি পোর্ট, যেগুলো এক্সটার্নাল হার্ডড্রাইভ বা পেনড্রাইভ সমর্থন করে। স্মার্ট টিভিতে সাধারণত তিনটি এইচডিএমআই পোর্ট থাকে। নেট ব্রাউজিং, অ্যাপস ইনস্টল, স্ক্রিন শেয়ারিং ইত্যাদি সুবিধার পাশাপাশি জনপ্রিয় কিছু অ্যাপও বিল্ট-ইন থাকে স্মার্ট টিভিতে।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি

অ্যান্ড্রয়েড টিভি অনেকটা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের মতোই। অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে স্মার্টফোনের মতোই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিছু ফ্রি অ্যাপস প্রি-ইনস্টল করা থাকে। এ ছাড়া আপনি চাইলে টিভিতে দেওয়া গুগল প্লে স্টোরে সাইন করার মাধ্যমে নতুনভাবে অ্যাপস ইনস্টল করতে পারবেন। এ ছাড়া চাইলে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনটি টিভির সঙ্গে সংযুক্ত করে নিতে পারেন এবং টিভিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ চাইলে যেকোনো ছবি বা ভিডিও ফোনে না দেখে টিভির সঙ্গে ফোনটিকে সংযুক্ত করে টিভিতে বড় স্ক্রিনে দেখার সুযোগ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি সরাসরি টিভিটিকে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ছোট কম্পিউটারও বানিয়ে নিতে পারবেন।

এলসিডি, প্লাজমা ও এলইডি

বাজারে থাকা এলসিডি, প্লাজমা ও এলইডি—এই তিন প্রযুক্তির টেলিভিশন রয়েছে। এর মধ্যে এলসিডির দাম তুলনামূলক কম। সাশ্রয়ী বাজেট হলে উজ্জ্বল ও অত্যন্ত হালকাপাতলা এ টেলিভিশনগুলো আপনার জন্য জুতসই হতে পারে। এলসিডি টেলিভিশনকে বলা হয় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। তবে প্লাজমা ও এলইডি টেলিভিশনের তুলনায় এলসিডিতে ছবির মান কম বাস্তবসম্পন্ন মনে হতে পারে। সে তুলনায় প্লাজমা টিভিতে স্বচ্ছ ও ঝকঝকে ছবি দেখা যায়। দ্রুতগতির খেলাধুলা উপভোগ করার জন্য প্লাজমা টিভিই সবচেয়ে ভালো বলে ব্যবহারকারীরা মতামত দেন। তবে প্লাজমা টেলিভিশনে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়। আর এলইডি টিভির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য, অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে। লাইট এমিটিং ডায়োড বা এলইডি টিভিতে কনট্রাস্ট রেশিও উন্নত। এর ফলে এলইডি টিভির দাম তুলনামূলক বেশি। বর্তমানে এলইডি, এলসিডি ও প্লাজমা টিভি চেনার বিষয়টি কষ্টকর হতে পারে। এখন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘এলইডি প্লাস’ ও ‘সুপার এলইডি’ নামেও টিভি বাজারজাত করছে।

এইচডি ও ফুল এইচডি

হাই ডেফিনেশন (এইচডি) টিভি ও ফুল-এইচডি টিভির মধ্যে সাধারণত পার্থক্য করা কঠিন। কিন্তু আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে ব্লু-রে মুভি দেখলে এই পার্থক্য ধরা পড়ে। আট ফুটের কম দূরত্ব থেকে টিভি দেখলে ফুল এইচডির দিকে যেতে পারেন। তবে যদি বেশি দূর থেকে টিভি দেখেন, তাহলে এইচডি টিভিই শ্রেয়। এইচডি টিভি রেজল্যুশন সর্বনিম্ন ৭২০ পিক্সেল। আর ফুলএইচডি হবে ১০৮০ পিক্সেলের।

ডলবি সাউন্ড

২০১৫ সালের শেষের দিকে প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারকারীরা একটি নতুন শব্দের (ডলবি অ্যাটমস) সঙ্গে পরিচিত হন। এই সাউন্ড সিস্টেমটা শব্দ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায় যোগ করে। বাসায় সিনেমা দেখার সময় এত দিন শব্দ আপনার চারপাশ থেকে প্রেরণ করা হতো। কিন্তু এই ‘ডলবি অ্যাটমস’ সিস্টেমের মাধ্যমে ওপর দিক থেকেও শব্দ প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেমন সিনেমাতে যদি হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ বা অন্য কোনো বস্তু সিনেমার স্ক্রিনে দৃশ্যমান হয় (ওপর দিয়ে যায় বা আসে), তাহলে আপনার মনে হবে যেন আপনার মাথার ওপর দিয়েই চলে গেল। আবার যদি আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো দেখায়, তাহলে মনে হবে যেন আপনার মাথার ওপর দিয়েই বিদ্যুৎটা চমকাল। এই অভিনব প্রযুক্তিসংবলিত নানা ব্র্যান্ডের টিভি এখন বাজারে পাওয়া যায়।