বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা: সুজন
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো নিঃসন্দেহে একটি পর্বতপ্রমাণ বাধা। এই বাধা দূর করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এখনই সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলতে হবে। যাতে নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে এবং কমিশন তার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ম্যান্ডেট সফলতার সঙ্গে পালন করতে পারে।
আজ শনিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে সুজনের বক্তব্য তুলে ধরতে মূলত ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসির অতুলনীয় ক্ষমতা রয়েছে। আর সাংবিধানিক কাঠামোতে নির্বাচন মানেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই যেনতেন প্রকারের বা কারচুপির নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্প্রতি আরপিওতে কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুটি প্রস্তাব নিয়ে সুজন কিছুটা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া কমিশনের প্রস্তাব অসম্পূর্ণ। এতে আরও অনেকগুলো বিষয় যুক্ত হওয়া আবশ্যক। ২০৩০ সালের মধ্যে সব দলের সব স্তরের কমিটিতে এক–তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রস্তাবিত বিধানকে স্বাগত জানায় সুজন।
নির্বাচনের ফলাফল বাতিলে ইসির ক্ষমতার আওতা বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ও গেজেট প্রকাশ স্থগিত এবং পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা বিদ্যমান আইনেই ইসির আছে। কমিশন তা ব্যবহারও করে আসছে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি যেন তার ক্ষমতার ব্যাপ্তি সম্পর্কে অবগত নয় বা উপলব্ধি করতে পারছে না। আপাতদৃষ্টে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চাওয়া ইতিবাচক মনে হলেও এ ধরনের ক্ষমতা চাওয়ার ফল সম্পূর্ণ উল্টোও হতে পারে।
নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম মামলায় রায়েই ইসিকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসি যদি মনে করে এই রায় আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন, তবু এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হওয়াটা আত্মঘাতী হতে পারে। মন্ত্রণালয় কমিশনের প্রস্তাবটি নাকচ করে দিতে পারে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তাঁরা মনে করেন আরপিও সংশোধনের লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে ইসি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। কারণ, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কমিশনের সংলাপে আসা প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় না নেওয়ার অভিযোগ আছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অর্থবহ করার ক্ষেত্রে আরও কিছু প্রস্তাব এতে যুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃ প্রবর্তন করা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে মনোনয়নপত্র বাতিলের সুস্পষ্ট বিধান করা, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করার বিধান আরপিওতে যুক্ত করা, প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব যাচাই-বাছাই করার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা, রাজনৈতিক দলের অডিট করা হিসাব যাচাই-বাছাই করার বিধান আরপিওতে যুক্ত করা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত কোনো প্রস্তাব নেই। বলটা রাজনৈতিক দলের কোর্টে। এটা জাতীয় সমস্যা। সবাই মিলে ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রায় মানা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। সুপ্রিম কোর্ট যেটা বলেছেন, সেটা ইতিমধ্যেই আইনে পরিণত হয়েছে। তাই কোর্টের রায়ে কমিশনকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা দেওয়ার পর তা আবার আইন সংশোধন করে সংযুক্ত করতে চাওয়ার উদ্দেশ্য কী, তা প্রশ্নের উদ্রেক করে। তবে রায়ের বিষয়টি যাঁরা অবগত নন, তাঁদের অবগত করার জন্য অনেক সময় আইনে রায় সংযুক্ত করা হয়।
শাহদীন মালিক বলেন, কমিশনের সংশোধনী প্রস্তাব আনার প্রক্রিয়াটিও তাঁর কাছে স্বচ্ছ মনে হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সংলাপে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত ও প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে এই সংশোধনী প্রস্তাব করা উচিত ছিল।
সভাপতির বক্তব্যে বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ে নির্বাচন বাতিলে কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। তারপরও কমিশনের এই ক্ষমতা আবার চাওয়াটা সন্দেহ জাগায়।
প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ।