রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬ মাসে ৪১ জন নিহত: আসক

আইন ও সালিশ কেন্দ্র

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতায় ৪১ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় রাজনৈতিক সংঘাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩ হাজার ৭৩৬ জন।

চলতি বছরের ছয় মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ১০টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও নিজস্ব সূত্র থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আসক।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী সহিংসতা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৪৪০টি।

কারা হেফাজতে ৪৬ মৃত্যু

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ৬ মাসে কারা হেফাজতে ৪৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কয়েদি ২০ জন ও হাজতি ২৬ জন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩ জন হাজতি ও ১০ জন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে।

১৪৫ সাংবাদিক নির্যাতন

আসক বলছে, গত ছয় মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বাধার শিকার হওয়ার ঘটনা ছিল উল্লেখ করার মতো। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১৪৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ বলে বাক্‌স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। অথচ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে।

এ ধরনের ঘটনা প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

ধর্ষণের পর ১৪ নারীকে হত্যা

গত ৬ মাসে ২৫০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই সময় ধর্ষণের পর ১৪ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আর ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন তিনজন।

এ ছাড়া ৫৮ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ সময় পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৬৯ জন। এর মধ্যে ৮৪ জন স্বামী কর্তৃক হত্যার শিকার হয়েছেন। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা হয়েছেন ৯৪ জন।

সহিংসতার আরও ঘটনা

জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২৭টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০টি বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, ৫টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ২১টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এ ছাড়া ৬ ছয় মাসে যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪৬ নারী-পুরুষ। যাঁদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ১১৩ নারী ও ৩৩ পুরুষ। যৌন হয়রানির কারণে একজন নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

আসকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৬ মাসে মোট ৬৩১ শিশুটি বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ২৩৯টি শিশু। পাশাপাশি তিন ছেলেশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

এ ছাড়া চলতি বছরের ৬ মাসে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে ১৩ বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

আসক মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যকীয়। অন্যথায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।