পুলিশকে স্বাধীন স্থানীয় সরকারের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক এক সভায় আলোচকেরা। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এ সভার আয়োজন করেছবি: সংগৃহীত

অপরাধ নির্মূলের পরিবর্তে প্রায় সব অপরাধের সঙ্গে পুলিশ জড়িত হয়ে পড়েছে। তাই পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। পুলিশের কেন্দ্রীয় কাঠামো বাতিল করে স্বাধীন স্থানীয় সরকারের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষায় পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক এক সভায় আলোচকেরা এসব প্রস্তাব দেন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এ সভার আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আত্মদান আমাদের প্রজা থেকে নাগরিকে উন্নীত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। যে সুযোগ আমরা রাষ্ট্রের কাছে চাই, মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে সেগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। অতীতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনী গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, বিরোধী মত দমনসহ সব অপকর্মই করেছে।’ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যাঁরা দ্রুত প্রমোশন ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে তদন্ত করে জনগণের সামনে প্রকাশ করার আহ্বান জানান তিনি।

সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠান সাবেক আইজিপি এনামুল হক। তাতে তিনি বলেন, পুলিশ আইন ও পিআরবির (পুলিশ রুলস অব বেঙ্গল) অসামঞ্জস্যতা দূর করতে হবে। ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নিয়োগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব দিতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে পুলিশকে ব্যবহার বন্ধসহ পুলিশের আর্থিক হিসাব-নিকাশের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সামজীর আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পুলিশ চলে ব্রিটিশ উপনিবেশের তৈরি আইনে। তাই এ পুলিশ বারবারই জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায় এবং জুলুমের বাহিনীতে পরিণত হয়। তিনি পুলিশের নাম ও পোশাক পরিবর্তনের পাশাপাশি পুলিশের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে জনগণের মতামত দেওয়ার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করেন।

পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান বলেন, বিরোধী দলে থাকতে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, র‍্যাব বাতিল করবেন। ক্ষমতায় গিয়ে তিনিই ইতিহাসের সর্বোচ্চ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য র‍্যাবকে ব্যবহার করেছেন। ২০ হাজার সরকারি চাকরিজীবীকে (পাবলিক সার্ভেন্ট) ঠিক করতে পারলে বাংলাদেশ ঠিক হয়ে যাবে। তাঁদের জবাবদিহির আওতায় না আনতে পারলে বাংলাদেশ সংস্কার অর্থবহ হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, পুলিশের কেন্দ্রীয় কাঠামো ভাঙতে হবে। পাশাপাশি সত্যিকারের স্বাধীন স্থানীয় সরকার গঠন করে পুলিশকে তাদের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কার না করে শুধু পুলিশকে সংস্কার করা যাবে না। পুলিশ সংস্কার কমিশনের জন্য দ্রুত আলোচনা করে একটি সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, অপরাধ নির্মূলের পরিবর্তে প্রায় সব অপরাধের সঙ্গে পুলিশ জড়িত হয়ে পড়েছে। আইনি সহযোগিতা চাইতে গিয়ে মানুষকে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি চাকরিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের স্ক্রিনিং করে সৎ ও কর্মক্ষম কি না, তা যাচাইয়ের প্রস্তাব দেন।

সভায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ নিজার, পুলিশের সাবেক উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, আলাপনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়ালিউল্লাহ বাশার, আইন গবেষক রাশেদ রাহম প্রমুখ বক্তব্য দেন।