শয্যায় রোগী নেই, তবু ওষুধ সরবরাহ দেখিয়ে আত্মসাৎ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার অভিযান চালান দুদকের কর্মকর্তারাছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে অনেক রোগীকে সরকারি ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও তাঁরা তা পাচ্ছেন না। এমনকি খালি শয্যাতেও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি ওষুধ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে অভিযানটি চালায় দুদকের চার সদস্যের একটি দল।

দুদক জানিয়েছে, ছদ্মবেশে কিছুক্ষণ ঘোরার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোন কোন শয্যায় কী কী ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে, তার তথ্য চান দুদক কর্মকর্তারা। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, প্রতিটি শয্যায় ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা রোগী পর্যন্ত না পৌঁছানোর প্রমাণ পান তাঁরা। এ ছাড়া অনেক খালি শয্যাতেও ওষুধ সরবরাহ দেখানো হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব বিষয়ে দুদকের কর্মকর্তারা দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ড ইনচার্জ মিনতি বড়ুয়া ও সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা খাতুনকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ ছাড়া চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখ না থাকলেও ওয়ার্ড রেজিস্ট্রারে দামি ওষুধের নাম লিখে স্টোর থেকে তা তুলে নেওয়ার প্রমাণও পেয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এনামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, হাসপাতালের রোগীদের সরকারি ওষুধ সরবরাহ না করে আত্মসাৎ করা হয়। এরপর রোগীদের সেগুলো বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হাসপাতালে ছদ্মবেশে গিয়ে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করি।’

দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রথমে জরুরি বিভাগে গিয়ে রেজিস্টার্ড খাতায় দেখি, প্রতিটি বেডে ওষুধ বিতরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা তদন্ত করে দেখেছি, তাদের কোনো ওষুধ দেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকটি শয্যায় রোগীও পাওয়া যায়নি। কিন্তু খাতায় দেখানো হয়েছে, সেসব শয্যায় ওষুধ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওষুধ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

দুদকের অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে এনামুল হক বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালককে জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি, তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের অভিযানের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেব।’

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা আসবেন বলে আমাকে সকালে জানিয়েছিলেন। তবে এটা আমি হাসপাতালের কাউকে বলিনি। দুদকের এই পদক্ষেপকে আমি স্বাগত জানাই। তাঁরা ওষুধসংক্রান্ত কিছু অনিয়ম পেয়েছেন। আমরা প্রতিনিয়ত অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের পুলিশে দিচ্ছি।’