বালু সরবরাহ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সংঘর্ষ, আহত ৫

মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বালু সরবরাহ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে জড়িত দুটি পক্ষের মধ্যে একটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মাসুকুল আলম। অন্য পক্ষটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন জামায়াতের জামাল উদ্দিন। তবে জামায়াতের দাবি, জামাল তাদের ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’, তাঁর কোনো দলীয় পদ নেই। তবে এ ঘটনায় জামায়াতের কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেন ইউনিয়ন শাখা জামায়াতের আমির।

সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন জামায়াতের জামাল উদ্দিন,  মো. আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী এবং বিএনপির মাসুকুল আলম ও মো. মামুন। মো. মামুন ও জামাল উদ্দিনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘর্ষে জড়ানো দুটি পক্ষ, পুলিশ ও  স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে জোরারগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পরীক্ষাগার ভবন তৈরির কাজ চলছে। নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেয়েছে শেল্‌টেক্‌ নামের ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটিতে উপঠিকাদার হিসেবে বালু ভরাট ও ইট বালুর সরবরাহের কাজ পেতে চেষ্টা করে আসছিলেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছিল।

গত রোববার প্রকল্প এলাকায় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ট্রাকভর্তি কিছু বালু নিয়ে যান। ট্রাক ও বালুগুলো অন্য স্থানে সরিয়ে নেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গতকাল সকালে জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে জামায়াতের কয়েকজন আবারও বালু নিয়ে প্রকল্প এলাকায় যান। খবর পেয়ে দুপুরের দিকে জোরারগঞ্জ বাজার এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহড়া দেন। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে বাজারে আসা মানুষ ও দোকানিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব মাসুকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বালু ভরাট ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ জামায়াত–শিবিরের লোকজন ও আমাদের ছেলেরা মিলে কীভাবে করতে পারে, সে বিষয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জোরারগঞ্জ বাজারে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বৈঠক না করে উল্টো তাঁরা মারামারির প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। বলতে গেলে বিনা উসকানিতে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে জামায়াত-শিবিরের হেলমেট পরা অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করেছেন। হামলায় আমি এবং আমাদের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। দলের হাই কমান্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামাল উদ্দিন জামায়াতের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি কার্যাদেশ নিয়ে জোরারগঞ্জ টেক্সটাইলের উন্নয়নকাজ করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে কাজে বাধা দিয়েছেন। জামাল ও তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় জামায়াতের চার-পাঁচজন কর্মী আহত হয়েছেন। মূলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।’

পরীক্ষাগার নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শেল্‌টেকের কর্মকর্তা প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ‘মাটি ভরাটের কাজ এখনো কাউকে চূড়ান্তভাবে দেওয়া হয়নি। ভরাট কাজের জন্য বালু ও মাটির নমুনা নিয়ে আসা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।’

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে আহত তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে মামুন ও জামাল গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের জখম ছিল।

জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিফাতুল মাজদার প্রথম আলোকে জানান, একটি নির্মাণ প্রকল্পে উপঠিকাদার হিসেবে কাজ পাওয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের দুটি পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় চার-পাঁচজন আহত হওয়ার খবর শোনা গেছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।