আইন হতে হবে মানুষের অধিকারের সুরক্ষায়

টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আইন করার পরামর্শ।

বাংলাদেশে ডিজিটাল জগৎ–সংশ্লিষ্ট যেসব আইন আছে, তা মানুষের অধিকার সুরক্ষার চেয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকেই শক্তিশালী করেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘প্রাগৈতিহাসিক সময়ে’ও নিয়ে গেছে। এসব আইনে বিচারিক পর্যায়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ছিল। বর্তমান সরকারের সময়ে আইনি সংস্কারে মানুষের অধিকারকে সুরক্ষা দিয়ে আইন হতে হবে।

গতকাল বুধবার টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। 

ওয়েবিনারে ‘আ নিউ ডিজিটাল ফ্রন্টিয়ার: রিফর্মিং ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি লজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইন নিরাপত্তা, কনটেন্ট (আধেয়) নিয়ন্ত্রণ, সাইবার নিরাপত্তা, নজরদারি, গোপনীয়তা, তথ্য সুরক্ষা, প্রতিযোগিতা ও ডিজিটাল ডোমেইনে ভোক্তা সুরক্ষার বিষয় সম্পর্কিত বাংলাদেশের আইন নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে আইন বাতিল, সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ওয়েবিনারে বাক্‌স্বাধীনতা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, কারও যেমন কিছু বলার স্বাধীনতা আছে, আবার তেমনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখারও অধিকার রয়েছে। এসব দেখার জন্য আদালত রয়েছেন। কথা বলার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে দেখতে হবে, কারও বিশ্বাস বা ধর্মকে আঘাত করে অর্থাৎ অন্যের ক্ষতি করে, এমন কিছু না বলা।

 সাবেক এই বিচারপতি আরও বলেন, কোনো আইন করার আগে অবশ্যই মানুষের মতামত নিতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে যেমন ভালো কিছু ধারা আছে, তেননি বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রেও আইন করে রাখা হয়েছে। এসবের জন্য আইনের দরকার নেই। 

সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া নানা অপতথ্য, ভুল তথ্য মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, এসব বিষয় আগামী দিনের আইনগুলোয় বিবেচনা করা হবে। বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা হচ্ছে মানুষের অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়া।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, আমরা নজরদারি, সেন্সরশিপ ও বাক্‌স্বাধীনতার বাধাগুলো সরাতে চাই বা কমিয়ে আনতে চাই; কিন্তু আমরা এটাও স্বীকার করছি যে বাক্‌স্বাধীনতার বিষয়কে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিতেও চাই না। কারণ, আমরা ঘৃণাসূচক বক্তব্য ও হয়রানি থেকেও সুরক্ষা চাই। অর্থাৎ এখানে দেশের আইনের ভিত্তি কী, সেখানে এমন কিছু আছে কি না, যা নাগরিককে সুরক্ষা দেয়, সেটি বিবেচ্য। শুধু আইনে কী আছে, সেটি না দেখে প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলোও বিবেচনায় নিতে হবে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, যে আইনগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা। এসব আইন মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার চেয়ে সরকারকে শক্তিশালী করেছে। বিগত সরকার এসব আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেআইনি আচরণ করেছে। 

উদাহরণ হিসেবে কামাল আহমেদ বলেন, মন্ত্রীর নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করা ও সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা, ফোনালাপ ফাঁস করে মানুষকে হয়রানি করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছিল। ভবিষ্যতে আইনগুলো যেভাবে আসবে, সেখানে যেন এসব বিষয়ের যথাযথ পদক্ষেপ থাকে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হয়।

 সঞ্চালকের বক্তব্যে টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, আইনগুলো দেখায়—কীভাবে বক্তব্য, নারীর নিরাপত্তা, বিদেশনীতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সরকার চিন্তা করে। আইনগুলো প্রকৃতপক্ষে কাঠামোগত ও পদ্ধতিগতভাবে মৌলিক অধিকারকে ক্ষতি করেছে। 

ওয়েবিনারে প্রতিবেদন তুলে ধরেন টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের গবেষণা দলের প্রধান শাহজেব মাহমুদ। আলোচনায় অংশ নেন আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুর রহমান ও গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভের সামায়া আনজুম।