আইসিটি আইনে দায়ের সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান

২০১৮ সালে বাতিল হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস’-এর ট্রায়ালওয়াচ ইনিশিয়েটিভ ও বাংলাদেশের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। প্রতিষ্ঠান দুটি গতকাল শুক্রবার যৌথভাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ আহ্বান জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বর্তমানে দেশের কঠোর সাইবার আইনগুলো পুনর্মূল্যায়নে একটি সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি সাইবার আইনের আওতায় থাকা ‘মতপ্রকাশ–সম্পর্কিত’ সব মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা যথার্থ দিকনির্দেশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে উদ্ধৃত করে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিএসএ (সর্বশেষ সংস্কার করা আইন) মূলত ডিএসএর প্রায় সব কঠোর বিধানকেই নতুন করে যুক্ত করেছে, যার মধ্যে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৫৭ ধারা ও ডিএসএ বাতিল করা হলেও সরকারি তথ্য অনুসারে, ডিএসএ ও আইসিটি আইনের অধীন করা এক হাজারেরও বেশি মতপ্রকাশ–সম্পর্কিত মামলা এখনো চলছে। ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ট্রায়ালওয়াচের পর্যবেক্ষণে থাকা একটি মামলাও এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘হ্যাকিং, যৌন হয়রানি ও অন্যান্য গুরুতর সাইবার অপরাধের বিচার হওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা আইন অত্যন্ত অস্পষ্ট ও প্রশ্নবিদ্ধ। এতে বিরোধী মত দমনের অনেক উপাদান রয়েছে। তাই আমরা এ আইনের অধীন দায়েরকৃত সব মামলা বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে এখন আইসিটি আইনের অধীন থাকা সব মামলা বাতিল করা উচিত। কারণ, এগুলোর আর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) বাতিল হওয়ায় আইসিটি আইনের জন্য থাকা সংরক্ষণ বিধানটি স্বাভাবিকভাবে আর কার্যকর থাকে না। সাইবার নিরাপত্তা আইনে (সিএসএ) একই সংরক্ষণ বিধান থাকলেও তা শুধু ডিএসএর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং আইসিটি আইনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই আইসিটি আইনের অধীন থাকা মামলাগুলো এখনো বিদ্যমান থাকার আর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

ট্রায়ালওয়াচের বিশেষজ্ঞ ও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রেবেকা মামেন জন বলেন, আইসিটি আইনের অধীন থাকা মামলাগুলোর কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বাতিল হয়ে যাওয়া আইনের অধীন থাকা পুরোনো মামলা আবার বহাল রাখা অনুচিত। বিশেষ করে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকার খর্ব করতে এ আইন ব্যবহার করা স্পষ্টতই আইনের অপব্যবহার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘আপত্তিকর তথ্য’, ‘ভুয়া খবর’ ও ‘আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা’—এ–সম্পর্কিত অস্পষ্ট বিধান ও আইনগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আদালত ‘আপত্তিকর মন্তব্য’ ও ‘ভুয়া খবর’–সম্পর্কিত আইন বাতিল করছে।

দেশের আইন ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ উল্লেখ করে অবিলম্বে আইসিটি আইনের অধীন থাকা সব মামলা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।