ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেওয়ার পর বাজারে গিয়ে যা দেখা গেল
বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশে প্রথমবারের মতো সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলেও ঢাকার বাজারে তা কার্যকর হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ও আজ শুক্রবার সকালে দুই দফায় রাজধানীর তিনটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। তবে অনেক ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও বিক্রেতা তিনটি কৃষিপণ্যের বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়ে জানেনও না।
নতুন বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬ থেকে ২৭) এবং দেশি পেঁয়াজের দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। গতকাল দুপুরে সরকার এমন দাম বেঁধে দেয়।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার কারওয়ান বাজারে গিয়ে এক তরুণ দোকানিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘দেশি পেঁয়াজ কেজি কত?’ জবাবে দোকানি বললেন, ‘৯০ ট্যাকা কেজি।’এই প্রতিবেদক বললেন, ‘সরকার দুপুরে দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা।’এমন কথা শুনে এবার তরুণ দোকানি খেপে গিয়ে বললেন, ‘যান তাইলে সরকারের থন পেঁয়াজ লন।’
কয়েক পা হেঁটে আরেক দোকানিকে দেশি পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞাসা করতেই দোকানি বললেন, ‘৮৫ টাকা কেজি হলে নিতে পারবেন।’ আলু ও ডিমের খুচরা মূল্য একই রকম আছে। সাদা ও লাল আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। আর দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ৩৬০ টাকা। আর খুচরা কেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি।
পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও আলুর পসরা সাজিয়ে বসে ছিলেন ব্যবসায়ী সোহেল রানা। আলাপকালে তিনি বলেন, সরকারের নতুন সিদ্ধান্তের কথা তিনি জানেন না। হয়তো দু-এক দিন পর বিষয়টি বোঝা যাবে। সোহেল বলেন, তিনি আলু বিক্রি করছেন ৪৫ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারে রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছিলেন এক বৃদ্ধ। দোকানটির পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই দেখা গেল মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি আধা কেজি পেঁয়াজ কিনলেন ৪০ টাকায়। পরে তাঁর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কথা হলো। তিনি বলেন, তাঁর নাম আবদুল মমিন। ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।
এবার কিচেন মার্কেটের নিচতলায় গিয়ে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ও হালি ৫০ টাকা বিক্রির খবর জানা গেল। ডিমের দোকানি মজিবুর রহমান বলেন, ‘সরকার দাম কমাইলে হবে? আড়তদারদের ডিমের দাম কমাইতে হবে।’
কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিল হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে মধুবাগ বাজারে গিয়ে দেখা গেল, দেশি পেঁয়াজ যথারীতি ৯০ টাকা কেজির কম ছাড়ছেন না বিক্রেতা। আলুর দাম জানতে চাইলে দোকানি বলেন, ‘লাল বা সাদা যে আলুই নেন, ৫০ টাকা কেজি।’
মধুবাগ বাজার থেকে অল্প দূরে মীরবাগ কাঁচাবাজার। এই বাজার থেকে গতকাল রাত ৮টার দিকে ৫০ টাকা কেজি আলু কিনে বাসায় ফিরছিলেন ফেরদৌসী আক্তার নামে এক নারী। তিনি বলেন, তিনটি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার খবর তিনি জানেন। তবে ব্যবসায়ীরা সেটা মানবেন কি না, কে জানে?
৮৫ টাকা কেজির কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না মীরবাগ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী এলাহি মিয়া। পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আবার কারওয়ান বাজারে আড়তে গেলে বোঝা যাবে দাম কমছে কি না।’
আজ সকাল ১০টার দিকে আবারও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর ফার্মের মুরগির ডিম ৫০ টাকা হালি।
এদিকে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেন। টিপু মুনশি বলেন, ‘উৎপাদন খরচ হিসাব করে আমরা দেখেছি ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। সে জন্য আমরা কৃষি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এই দাম নির্ধারণ করেছি।’