বিশ্ববিদ্যালয় অচল, মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় শিক্ষকেরা

*ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার মাধ্যমে বার্তা পেয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব।

*বিশ্ববিদ্যালয়ে আজও কর্মবিরতি চলবে।

*অন্য সরকারি সংস্থায়ও ভেতরে–ভেতরে অসন্তোষ।

প্রতীকী ছবি

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টানা তিন দিন ধরে অচল। সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে ক্লাস, পরীক্ষা হচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে চেষ্টা করেও সরকারি কোনো ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

নিজামুল হক ভূঁইয়া আরও বলেন, সড়কমন্ত্রী তাঁদের গতকাল সন্ধ্যায় যেতে বলেছিলেন। সেটা হয়নি। বৈঠকটি আজ সকালে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা। শিক্ষকেরা আরও জানিয়েছেন, আজ তাঁদের কর্মসূচি চলবে। দাবি মানা না হলে পরবর্তী সময়েও কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে সড়কমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার ফলাফলের ওপর।

চলমান আন্দোলন ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। সংগঠনের মহাসচিব মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া রাত ১১টা ৫০ মিনিটে প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকটি এখনো চলছে।

শিক্ষকদের দাবি তিনটি—১. সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন বাতিল। ২. সুপার গ্রেডে (জ্যেষ্ঠ সচিবরা যে গ্রেডে বেতন পান) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং ৩. শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন গত মার্চে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর থেকেই প্রত্যয় কর্মসূচি চালুর বিরোধিতা করে আসছে। সরকারের দিক থেকে কেউ এ নিয়ে এত দিন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রথমবারের মতো বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। এতে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষকদের অনেকে। তাঁরা অর্থমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

কর্মবিরতির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কলাভবনের মূল ফটকে ছিল অবস্থান কর্মসূচি। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, “আপনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একটু কথা বলুন।” ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাকে বললেন, “আপনারা যে আন্দোলনটা করছেন, শিক্ষার্থীদের এভাবে...।”’

ওবায়দুল কাদের ডেকেছেন উল্লেখ করে নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি তাঁর (ওবায়দুল কাদের) কাছে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরলাম। তিনি বললেন, “আপনারা আরও দু-তিনজন শিক্ষকসহ সন্ধ্যায় আসুন।” আমি বললাম, আমার ফেডারেশন আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তিনি বললেন, “ঠিক আছে।” তবে বেশি লোকজন না নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছেন, যাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। এখন আমরা নিজেরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

ওবায়দুল কাদের তাঁদের আজ সকালে সময় দিয়েছেন বলেও জানান নিজামুল হক ভূঁইয়া। তিনি এ সময় অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়েও কথা বলেন। এই শিক্ষকনেতা বলেন, ‘তাঁর (অর্থমন্ত্রী) মঙ্গলবারের বক্তব্যটি আমরা গ্রহণ করিনি।’

প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এর বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির কেউ সড়কমন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষকদের বৈঠকে থাকবেন কি না, তা জানা যায়নি। পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে থাকার ব্যাপারে তাঁদের কেউ নির্দেশিত হননি।

বৈঠকটিতে অংশ নিতে গতকাল অনেকটা তাড়াহুড়া করে ঢাকায় আসেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখতে চান সড়কমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার ফল কী হয়।

অন্য সংস্থায়ও অসন্তোষ

পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রত্যয় কার্যকর করতে চাইছে ৪০৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সংস্থার ওপর। এগুলোর মধ্যে ৯০টি সংস্থা বর্তমানে সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশন দিয়ে থাকে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো এসব সংস্থার অনেকগুলোর মধ্যে প্রত্যয় নিয়ে ভেতরে–ভেতরে অসন্তোষ রয়েছে। গতকাল ৫টি সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান সুবর্ণ বড়ুয়া এ ব্যাপারে গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের।’